পেশাগত স্বাস্থ্য কোথায় দাঁড়িয়ে?

এই পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে হামেশাই আপস করা হচ্ছে।

- ডাঃ সুবৰ্ণ গোস্বামী

পে শাগত স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক শাখা, যা সমস্ত পেশার শ্রমজীবীদের সর্বোচ্চ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল কর্মীবর্গের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে কর্মকুশলতাও বজায় রাখা ও বর্ধিত করা, কাজের শর্ত ও কাজের পরিবেশের এমনভাবে উন্নতি ঘটানো, যাতে তা নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের সহায়ক হয়। পেশাগত স্বাস্থ্যের বিজ্ঞান ও চর্চা মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, আর্গোনমিক্স, নার্সিং, সাইকোলজি, হাইজিন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের আরও অনেক শাখাকে একত্রিত করেই করতে হয়। বহু দেশে মোট শ্রমজীবী মানুষের অর্ধেকের বেশি অপ্রথাগত ক্ষেত্রে কর্মরত, যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাস্থ্য-সুরক্ষার মান নিয়ন্ত্রক আইন বলবৎকরণের কোনও ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। শতকরা ৮৫ ভাগের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন ছোটমাঝারি শিল্পে, অপ্রথাগত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে ও পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে। তাঁদের পেশাগত স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। দীর্ঘ রোগভোগের এক বড় অংশের জন্য আঘাত, শব্দদূষণ, ক্যান্সার ঘটাতে পারে এমন রাসায়নিক নিয়ে কাজ, বায়ুবাহিত বিভিন্ন কণা, আর্গোনমিক্সের প্রয়োগের অভাবের মতো কয়েকটি পেশাগত বিপদের ঝুঁকিসমূহ দায়ী।

সবধরনের পিঠে ব্যথার মধ্যে ৩৭ শতাংশই ঘটে পেশাগত কারণে। যত মানুষের সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ) হয়, তার ১৩ শতাংশ, যত মানুষ শ্রবণশক্তি হারান, তাঁদের ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এগুলোর জন্য পেশাগত কারণ দায়ী। বিশ্বের সমস্ত অ্যাজমা রোগীদের ১১ শতাংশ, আঘাতজনিত অসুস্থতার ৮ শতাংশ, ফুসফুসের ক্যান্সারের ৯ শতাংশ, ব্লাড ক্যান্সারের ২ শতাংশ ও অবসাদের ৮ শতাংশের জন্য সরাসরি দায়ী তাঁদের কাজের শর্ত ও পরিবেশ। কর্মরত অবস্থায় এইসব অসংক্রামক রোগব্যাধিতে প্রতি বছর প্রায় সোয়া এক কোটি শ্রমজীবী মানুষ প্রাণ হারান। অধিকাংশ দেশে পেশাগত স্বাস্থ্য সমস্যায় গড়ে ৫ শতাংশ জিডিপি লোকসান হয়।