আম কাহিনি

আম বিদেশিদের চোখে পড়ার সম্ভবত এটিই প্রথম প্রামাণ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

- ডঃ সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া

আ ম হল ফলের রাজা। রূপ, রস ও সুবাসের বৈচিত্র্যে নয়নলোভা এবং মনোলোভা। গ্রীষ্মকালের অমৃত সুধা। ভারতের জাতীয় ফলও বটে। ফিলিপিন্সেরও জাতীয় ফল আম। সর্বপ্রথম ‘আম্র' শব্দটি পাওয়া যায়। যিশুখ্রিস্টের জন্মের এক হাজার বছর আগে লেখা বৃহদারণ্যক উপনিষদে। সংস্কৃতে ‘আম্র' শব্দ থেকেই আম শব্দের উদ্ভব। আম শব্দের অর্থ সাধারণ। ১৫১০ সালে ভারতে প্রথম পা রাখা

ইউরোপীয় বণিকরা ম্যাঙ্গো শব্দটি শেখে। আমের ইংরেজি নাম ম্যাঙ্গো, ১৬৭৩ সালে ইংরেজি অভিধানে লিখিত হয়। তামিল ভাষায় আমকে বলে ‘ম্যানকে’ বা ‘ম্যান-গে’। পর্তুগিজ উচ্চারণে তা ম্যাঙ্গা বা মঙ্গো, এ থেকে হল ম্যাঙ্গো। আমগাছের উৎসভূমি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে মালয় দ্বীপপুঞ্জ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের অনেকের মতে ভারত, ব্রহ্মদেশ (বর্তমান মায়ানমার) এবং মালয়েশিয়া আমগাছের উৎসস্থল। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে বীর আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করে সিন্ধু উপত্যকার আমবাগানে ছাউনি ফেলেছিলেন। তিনি সিন্ধু উপত্যকার সুদৃশ্য আমবাগানের সুমিষ্ট ফলের উল্লেখ করেছেন। আম বিদেশিদের চোখে পড়ার সম্ভবত এটিই প্রথম প্রামাণ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাঁচী স্তূপে ফলে ভরা একটি আমগাছের খোদাই পাওয়া যায়। সম্ভবত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ সর্বপ্রথম (৬৩২-৪৫ খ্রিস্টাব্দ) বহির্বিশ্বে আমের গুণগান সম্পর্কে প্রচার করেন। ইবন ইউকুল (৯০২-৬৮) ‘আমবাগান' গ্রন্থে আম্রকুঞ্জ ও আমের আনুষঙ্গিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ইবন বতুতা (১৩২৫-৪৯) ও জর্দানুস (১৩৩০)-এর ভ্রমণ বৃত্তান্তে আমবাগানের বর্ণনা রয়েছে। তুর্কি ফকির ও কবি আমির খসরু (১৩৩০) পারস্য গীতিকাব্যে হিন্দুস্থানের আম্রফল ও আম্রকুঞ্জ সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট বলে

বর্ণনা করেছেন। প্রাচীন সাহিত্য থেকে ধর্মীয়শাস্ত্র সর্বত্র তার উল্লেখ রয়েছে। বেদে আমকে ‘দেবতাদের ফল’ বলা হয়েছে। আর্য সভ্যতার প্রথম থেকেই আম চাষের নজির পাওয়া যায়।