প্রিয়-দর্শ অমল হোম

বেদনা ছিল না তা নয়, কিন্তু সে বেদনা আমাকে বদ্ধ করলে না আমাকে বেদনার পারের দিকে বহন করে নিয়ে গেল।'

- পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

১৯২৪ সাল। নতুন পৌর আইন প্রচলিত হলে চিত্তরঞ্জন দাশ হলেন কলকাতার মেয়র। দেশবন্ধুর অনেক উদ্ভাবনী পরিকল্পনার একটি ছিল কলকাতা মিউনিসিপাল গেজেট প্রকাশ। নবীন সুভাষচন্দ্র বসু তখন কলকাতা পুরসভার মুখ্যনির্বাহী আধিকারিক বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে সুভাষচন্দ্র আন্তরিক আহ্বান জানালেন অমল হোমকে সেই পত্রিকা সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, অমল হোম তখন চিত্তরঞ্জন ও সুভাষ বসু— দু'জনারই কীভাবে এতটা আস্থাভাজন বা প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন? এর উত্তর পেতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে পূর্বের কয়েকটি বছরের ঘটনা প্রবাহে।

১৯১৯-এর ৮ এপ্রিল। লাহোরের দৈনিক ট্রিবিউন-এর সহকারী সম্পাদক, পঁচিশ বছর বয়সি অমল হোম তখন ছুটিতে কলকাতায়। তাঁর সম্পাদক কালীনাথ রায়ের কাছ থেকে পেলেন একটি উদ্বেগজনক চিঠি। তিনি জানান, অমল যেন তাঁর টেলিগ্রাম পাওয়া মাত্র লাহোর রওনা দেন। কেননা সম্পাদক রায় যে কোনও সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা বোধ করছেন।

১০ এপ্রিল রাতে এল— ‘এক্ষুনি চলে এসো' – সেই প্রতীক্ষিত টেলিগ্রাম। বার্তা পাওয়ার পরদিনই পাঞ্জাব মেল ধরে লোহার রওনা হলেন অমল। তাঁর জানা ছিল না, লাহোর আর অমৃতসরে তখন চলছে স্যর মাইকেল ও’ডায়ারের দানবীয় সন্ত্রাস। ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দিন অমৃতসরে তিনি ট্রেন থেকে নেমে দেখেন— গোটা স্টেশন ব্রিটিশ সেনায় থিক থিক করছে। চারদিকে বালির বস্তার উপর বসানো রয়েছে মেশিনগান। অমল হোম তখনও জানতেন না— ওইদিন ওই শহরে ঘটে গেছে শতাব্দীর কী ভয়ঙ্কর গণহত্যা! বিকেল সাড়ে চারটেয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের সেনারা দশ হাজার নিরস্ত্র মানুষের উপর ১৫০০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে হত্যা করে কমপক্ষে হাজার মানুষ, গুরুতর আহত তার চেয়েও অনেক বেশি। স্টেশনে অমল হোম একজন সৈন্যের কাছে জানতে চান, কী হয়েছে। সৈন্যটি তার বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে বলে— ‘ওদিকে খুব মজার ব্যাপার হচ্ছে।'