গয়না বড়ির আখ্যান

গয়না বড়ি' একটি প্রাচীন কুটির শিল্প, যা বিউলি ডাল দিয়ে তৈরি হয় এবং গয়নার মতো রূপ ধারণ করে। এর দুটি প্রধান নাম হলো জিলিপি বড়ি এবং নকশা বড়ি। জিলিপি বড়ি পেঁচিয়ে তৈরি হয়, আর নকশা বড়ি সূক্ষ্ম নকশাযুক্ত। এই শিল্পের পেছনে একটি করুণ কাহিনি রয়েছে, যেখানে বিধবারা তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য এই গয়না বড়ি তৈরি করতেন। শীতকালে বিশেষত পৌষ থেকে মাঘ মাসে গয়না বড়ি তৈরি করা হয়, যার রঙ এবং রূপ বাড়ির ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।

- ভরত বাগ

'গয়না বড়ি' শব্দেই তার প্রকৃতির পরিচয়। ঠিক সোনা রুপোর গয়নার মতো রূপ। খালি নির্মাণ সামগ্রী আলাদা। ধাতু নয়, মাঠের ফসল ডাল দিয়ে তৈরি। বিউলির ডাল। যার পূর্ব মেদিনীপুরের আঞ্চলিক নাম 'বিরি কলাই'। কলাই মানে ডাল। বহু শতাব্দী প্রাচীন কুটির শিল্প এই বড়ি নির্মাণ। এর আরও দু'টি নাম রয়েছে। জিলিপি বড়ি ও নকশা বড়ি। জিলিপির মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি হয় বলে ‘জিলিপি বড়ি’। গয়নার মতো সূক্ষ্ম নকশা সমন্বিত অতি দৃষ্টিনন্দন রূপের জন্য নাম হয়েছে ‘নকশা বড়ি’। গ্রামেগঞ্জে জিলিপি বড়ি নামটাই বেশি প্রচলিত।

গয়না বড়ি তৈরির পেছনে একটা করুণ কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীনকালে বিধবারা নানান রকমের বড়ি রোদে শুকাতে দিত। বাল্যবিবাহ প্রথায় অল্প বয়সে বিধবা হওয়া বালিকাদের সাদা থান শাড়ি পরিয়ে বাইরের ঘরে নির্বাসনে রাখা হতো। কোনও মাঙ্গলিক কাজে তাঁদের কোনওরূপ সহভাগী করা হতো না। নিরামিষ ভোজনের বাধ্যবাধকতায় তাঁদের প্রয়াসে এই খাদ্যদ্রব্যটির নির্মাণ হয়। গহনা নারীদের দুর্বলতা হলেও, বিধবাদের অলঙ্কার ধারণে নিষেধ ছিল। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো, গহনা বড়ি বানানো ও তার পরিচর্যা করা তাঁদের বিশেষ করণীয় কাজ হয়ে ওঠে। তাঁদের বৈধব্যদশায় গয়না বর্জিত জীবনের কষ্ট লাঘবের উপায়ের পেছনে নাকি এই বড়ি তৈরির ইতিহাস। পরে ওই বড়ি গৃহস্থের সকলের কাছে রসনাতৃপ্তির একটি মুখ্য সাধন হয়ে ওঠে।