মাকড়সার জাল

শর্বরী বিপদের মুখে পড়ে নিজেকে বাঁচাতে সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে চলেছে।

- সুজিত বসাক

সেটাই ভালো। আসলে আমার জামাই আবার একটু সে অন্যরকম... স্বপ্না সবার সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করুক সেটা চায় না। ভীষণ রাশভারী মানুষ। অভিজাত ফ্যামিলি, স্বপ্নাকেও সেভাবেই চলতে হয়। তবে মনটা খুব বড়ো। স্বপ্না বাড়ির জন্য এত কিছু করে কোনওদিন বাধা দেয় না। আমিও স্বপ্নাকে বলি, যে যেমন তার সঙ্গে সেভাবেই মানিয়ে চলতে হয়। প্ৰথম প্রথম অশান্তি করত স্বপ্না, এখন আর করে না। –কতদিন হল বিয়ে হয়েছে স্বপ্নার ? –এই আষাঢ়ে দেড় বছর হবে। কী নাম আপনার জামাইয়ের? —রত্নদীপ পোদ্দার। বিষম খেল শর্বরী। কাশির দমকে কেঁপে উঠল শরীর। কোনওরকমে বলল, ‘একটু জল।'

স্বপ্নার মা দ্রুত পায়ে জল এনে বললেন, ‘এই নাও... শরীর খারাপ করছে?' শর্বরী জল মুখে দিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, 'আমি ঠিক আছি। আপনি স্বপ্নার ঠিকানা আর ফোন নম্বরটা লিখে দিন।'

স্বপ্নার মা আবার ভিতরে চলে গেলেন। শর্বরী ভাবতে লাগল— এ কি তার অফিসের বস রত্নদীপ পোদ্দার? নাকি একই নামের অন্য লোক? যদি তার বস হয়, তবে এ তো এক অদ্ভুত সংযোগ। রত্নদীপের বউ যে স্বপ্না এটা চাকরির মেয়াদে জানা হয়নি। অবশ্য এইসব ঘটনাগুলো না ঘটলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। ঘটনা প্রবাহই জানতে বাধ্য করাচ্ছে। অজানা একটা ভয়ে আবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল শর্বরী। স্বপ্নার মা স্বপ্নাকে শর্বরীর নামটা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নার কাছ থেকে সেটা যদি রত্নদীপ জেনে ফেলেন? শর্বরী গোপনে স্বপ্নার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে সেটা জানলে রত্নদীপ নিঃসন্দেহে আরও মরিয়া হয়ে উঠবেন। শর্বরী যেন স্পষ্ট দেখতে পেল, সেই ভয়ঙ্কর মাকড়সাটা তার দিকে আরও কয়েক পা এগিয়ে এসেছে।

রাতে শর্বরীর মনে হল, স্বপ্নাকে ফোন করা কি ঠিক হবে? শর্বরী এতদূর অগ্রসর হয়েছে জানলে রত্নদীপ কি তাকে ছাড়বে? রত্নদীপের সঙ্গে স্বপ্নার বিয়ে হয়েছে, ওদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকাটাই স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত অনেক ভাবনা-চিন্তার পর শর্বরী ঠিক করল আপাতত স্বপ্নাকে ফোন করবে না। তার বদলে অনাদি মিত্রকে একটু ভালো করে বাজিয়ে দেখবে। রত্নদীপ সম্পর্কে লোকটা কতটা জানে সেটা একট বঝে নেওয়া দরকার।

পরের দিন অফিসে রত্নদীপের আচরণ খুব একটা অস্বাভাবিক লাগল না। শুধু একবার জিজ্ঞেস করলেন, “বি কে এন্টারপ্রাইজ-এর ব্যাপারটা নিয়ে কিছু ভাবলে ?'