আশ্চর্য সংগ্রহ!

তাঁর কালেকশনের দেখে সত্যিই তাজ্জব হতে হয়। ফর্মার রিজিওনাল ডিরেক্টর ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গৌতম দের পোর্সেলিন ও ক্রিস্টাল কালেকশন দেখলেন পৃথা বসু।

কী নেই তাঁর এই কালেকশনে! ফারাওয়ের মমির সঙ্গে সুগন্ধি দেওয়া হত পোর্সেলিনের যে পাত্রে, গৌতম দে-র সংগ্রহে রয়েছে তাও। মূলত ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে তাঁর যাবতীয় কালেকশনের পরিধি। পাশাপাশি রয়েছে জাপান, বাংলাদেশের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশেরও নানা কালেকশন। দীর্ঘ দিন ফরেন সার্ভিসে ছিলেন গৌতমবাবু। তাই কাজের সূত্রেই তাঁকে বিভিন্ন দেশে ঘুরতে হত। প্রথমে নিতান্ত শখে পোর্সেলিনের নানা শিল্প নিদর্শন সংগ্রহ করে আনতেন তিনি। পরের দিকে কেবল আর নিছক সংগ্রহ নয়, সেগুলোর শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক মূল্য কিংবা সেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গল্পের প্রতি আগ্রহ বাঁক নিল গৌতমবাবুর। বললেন, “আমি যখন স্কটল্যান্ড গেলাম, তখন এই বিষয়টা আমায় সবচেয়ে বেশি করে পেয়ে বসেছিল যেন। তখন নামকরা এক চ্যানেলে একটা শো হত। যাঁর বাড়িতে যা কিছু পুরনো অ্যান্টিক জিনিস আছে, সেগুলো তাঁরা এক জায়গায় জড়ো করতেন। সেখানে নিলাম হত ও কেনাবেচা চলত। এটা দেখে আমারও স্পৃহা জাগে। কোথায় এই অপূর্ব সমস্ত জিনিসপত্র পাওয়া যায়, তার খোঁজে সপ্তাহের প্রত্যেক শনিরবি করে বেরিয়ে পড়তাম। দেখতাম প্রতিটা

জিনিসে যেমন করে জড়িয়ে আছে শিল্প, তেমনভাবে রয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ইতিহাসও। ফ্রান্সের ‘লেমো’ কোম্পানির একটা বিশেষত্ব ছিল। তারা তাদের পোর্সেলিনের কাজে ব্যবহার করত কোবাল্ট ব্লু রং। জার্মান কোম্পানিগুলো তাদের কাজে ফুটিয়ে তুলেছিল অবিভক্ত জার্মানির জলছবি। ইউরোপে যে শিল্প বিপ্লব হয়েছিল, তার দুর্দান্ত প্রভাব পড়েছিল এখানকার পোর্সেলিন, সেরামিক, বোন-চায়নার নানা সামগ্রীতে। তাতে ফুটে উঠত প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। প্রথমে কেবল ক্রিস্টালের জিনিস সংগ্রহের ঝোঁক ছিল। তারপর ধীরে ধীরে পোর্সেলিন, বোন চায়নার সামগ্রী সংগ্রহ করতে শুরু করি। আরম্ভ করলাম এই বিষয় সংক্রান্ত পড়াশোনা। সেই তখন থেকে যে শুরু হয়েছে, আজও তা চলছে সমান তালে। অনেক জিনিস চুরি হয়েছে। ভেঙেও গিয়েছে অনেক। এই প্রত্যেকটা আমার হৃদয়ের এক একটা টুকরো।”