মায়েরা যখন অনুপ্রেরণা...

মায়েদের অনুপ্রেরণা পথ দেখিয়েছে গোটা বিশ্বকে। আজ যাঁরা বিশ্ববন্দিত, তাঁদের জীবনে মায়েদের প্রভাব কতখানি? বোঝার চেষ্টায় অনিকেত গুহ।

মা য়ের কোল হয়তো এই পৃথিবীর নিরাপদতম স্থান। ‘মা’ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা অপার বিশ্বাস ও স্নেহের বুনন। বিশ্বে যাঁরা স্বনামধন্য, যাঁদের কীর্তি-প্রতিষ্ঠার কথা ফেরে লোকের মুখে মুখে, তাঁদের জীবনে মায়েদের স্থান ঠিক কোথায় ছিল?

বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা...

গোটা বিশ্বে ভারতের আসন প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জীবনের প্রতিষ্ঠার পিছনে তাঁর মা ভুবনেশ্বরী দেবীর অবদানের কথা তিনি বার বার স্বীকার করেছেন। ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন একজন বলিষ্ঠ হৃদয়ের নারী। ন্যায্য সম্পত্তির দাবিতে জীবনের একটা বড় সময়ে তিনি একাই লড়াই চালিয়েছিলেন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছোট্ট বিলেকে (বিবেকানন্দ) তিনি শিখিয়েছিলেন মাথা উঁচু করে চলতে। তাঁর আধ্যাত্মিক মনোভাব গভীর প্রভাব ফেলেছিল নরেনের ছোট্ট জগতে। আমেরিকায় থাকাকালীন বিবেকানন্দ তাঁর এক বন্ধুকে লিখছেন,'...যদি সমগ্র পৃথিবীতে আমার ভালোবাসার কোনও সত্তা থেকে থাকে, তবে তিনি হলেন আমার মা।' কলকাতায় থাকাকালীন স্বামীজী প্রায়ই ছুটে যেতেন তাঁর মায়ের কাছে। ১৯০১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “... কেন মা-কে পুজো করা উচিত? কারণ তিনি নিজেকে বিশুদ্ধ করেছেন... কঠোর তপস্যা করেছেন।” সুভাষচন্দ্র বসুর দেশপ্রেমের আড়ালে বরাবরই ছিল একটা গভীর মাতৃপ্রেম। তাঁর এই দৃঢ় চরিত্র গঠনের পিছনে একটা বড় ভূমিকা ছিল প্রভাবতী দেবীর। তিনি মা হিসেবে যেমন ছিলেন কঠোর, তেমনই ছিলেন একজন বলিষ্ঠ নারী চরিত্র। সংসারের গণ্ডি তাঁর চিন্তাধারাকে বিশেষ আটকে রাখতে পারেনি। ১৯২৮ সালে প্রভাবতী দেবী ‘মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ’-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এক নয়, বরং দশের জন্য ভাবতে শিখিয়েছিলেন সুভাষকে। সেদিনের সেই শিক্ষাগুলোই হয়তো স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠেছিল দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রের মনে!