গ্রহণযোগ্যতার প্রাথমিক পাঠ

বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের জন্য আগে প্রয়োজন, বাবা-মায়ের ‘অ্যাকসেপ্ট্যান্স’। আলোচনায় মনস্তত্ত্ববিদ অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন সংবেত্তা চক্রবর্তী।

ঘ টনা ১: বাবা-মা মনস্তত্ত্ববিদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলেন, তাঁদের তিন বছরের মেয়ে বিশেষ ভাবে সক্ষম। তার পড়াশোনাও তেমন স্কুলেই হওয়া উচিত। রেগুলার স্কুলে পড়ালে তার অসুবিধাই হবে। মা যত ক্ষণ মনস্তত্ত্ববিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্কুলের ব্যাপারে, থেরাপির ব্যাপারে, বাবা একদম চুপ করে বসেছিলেন। সেই যে তাঁরা চলে গেলেন, আর এলেন না। কিছু দিন পরে মনস্তত্ত্ববিদ খবর পেলেন, বাবা সে দিন বাড়ি গিয়েই আত্মহত্যা করেছেন!

ঘটনা ২: ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন ভাস্কর এবং দেবযানী (নাম পরিবর্তিত)। ছেলে টুবলুর (নাম পরিবর্তিত) অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ধরা পড়ার পর থেকে, তাঁদের দেখলে বোঝাই যায় না তাঁদের মধ্যে কখনও ভালবাসার লেশমাত্র ছিল। একে অপরকে দোষারোপ, পরিবারকে নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি... শেষ পর্যন্ত বিয়েটা ভেঙে যায় তাঁদের!

ঘটনা ৩: ছেলে যে অটিস্টিক, জানার পর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মিত্রা (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর স্বামী একাই সন্তানকে বুকে আগলে মানুষ করেছেন পাঁচ বছর। তার পর আবার বিয়ে করেছেন সুমনাকে (নাম পরিবর্তিত)। সুমনাও বিবাহবিচ্ছিন্না, সাত বছরের ছেলে রয়েছে তাঁর। এই বাড়িতে এসে সুমনা পরম যত্নে বুকে তুলে নিয়েছেন কিয়ানকেও (নাম পরিবর্তিত)। থেরাপিস্টের সঙ্গে দেখা করা, তাঁর পরাম মেনে ছেলেকে বড় করা, দুই ভাইয়ের যাতে ভাব হয় তা দেখা... সবটা দু'জনে মিলেই করেন তাঁরা। তিনটে ঘটনাতেই পরিষ্কার, বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের মা-বাবারা যদি পরিস্থিতিকে গ্রহণ করতে না পারেন, তার অভিঘাত কত দূর ভয়ানক হতে পারে। তিনটি শিশুই অভিভাবক হারিয়েছে— একজনের জীবনে অবশ্য অন্য এক পেরেন্ট এসেছেন, যিনি সংবেদনশীল। তবে ‘পেরেন্টাল অ্যাকসেপ্ট্যান্স' না থাকলে আরও নানা ক্ষতি হতে পারে বাচ্চাটির। মেনে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আজকের আলোচনা।