সাহসিনী

'হ্যাঁ, আমার কোনও অমত নেই।' হাসল অরুণাংশু, ‘এই কথাটাই আমার জানবার দরকার ছিল।

- অনুপ ঘোষাল

শরীদাত্রী হাসিখুশি মেয়ে, হুল্লোড়বাজ। বিশ্বভারতীর এম.এ ক্লাসের ছাত্রী। সাবজেক্ট ইংরেজি। রামপুরহাট গার্লস স্কুল থেকে এইচ.এস দেওয়ার পর অনার্স পড়বার জন্য শান্তিনিকেতনের বিদ্যাভবনে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়েছিল। লিস্টে নাম উঠেছিল তিন নম্বরে, বাইরের স্টুডেন্ট পাঁচজনকে নেওয়ার কথা। মাধ্যমিকের পর হায়ার সেকেন্ডারিতেও কোনওরকমে স্টার মার্কসটুকু জুটে গিয়েছিল। লেখাপড়ায় দারুণ সিরিয়াস না হলেও মাথাটা পরিষ্কার। চেয়ে দেখবার মতো চেহারা বলে একটা বাড়তি কনফিডেন্স। সাজগোজে সচেতন। কথাবার্তায় চৌকশ।

শ্রীসদন হস্টেলে কটা বছর দিব্যি কেটে গেল। নাচগান হই-হুল্লোড় করেও ইংরেজি অনার্সে যে সাতজন ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে, সেই দলের মধ্যে ও-ও মাথা গলিয়ে দিয়েছে। এম.এ-র এখন ফাইনাল ইয়ার। তিনটে সেমিস্টার হয়ে গেছে। সামনের মে-তে ফোর্থটা মিটে গেলেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়বে। এরপর রিসার্চ-টিসার্চের ভাবনা মাথায় নেই। নেট বা সেট ক্লিয়ার করে কলেজটলেজে যদি একটা মাস্টারি জুটে যায়, তাহলে অবশ্য আপত্তি করবে না। ঝুটঝামেলার অন্য চাকরিবাকরিতে ও নেই। আই.এ.এস বা ডব্লু.বি.সি.এস হওয়ার জন্য কম্পিটিটিভ পরীক্ষার ধারে কাছে ঘেঁষবে না। তার চেয়ে যদি পছন্দের পুরুষের সঙ্গে চুটিয়ে সংসার করতে পারে, তাহলেই মেয়েটি খুশি।

কুড়ি-বাইশজন গবেষকও আছে, ফেলোশিপ নিয়ে কাজ করছে। অল্পবয়সি, চার-পাঁচজন টিচার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ক্লাসের বাইরে প্রায় বন্ধুর মতোই মেলামেশা করেন। ওঁদের সঙ্গে কথাবার্তায় শ্রীদাত্রী খুবই স্বছন্দ, কিন্তু তেমন কোনও ব্যাচেলরের সঙ্গে নিজেকে মনে মনে মেলাতে পারেনি। শুধু অরুণাংশুদাকে তার কেমন যেন অন্যরকম লাগে। মডার্ন পোয়েমস-এর ক্লাস নেন। ফোর্থ সেমিস্টারে অরুণাংশু মুখার্জির কাছে ডিসার্টেশানের কাজটা করার ইচ্ছে ছিল। সাহস পায়নি। ওঁর বয়সি অন্য টিচাররা কথাবার্তায় খুব খোলামেলা হলেও এ.এম বড্ড রাশভারী। বয়স তো মনে হয় ত্রিশের কোঠায়। কিন্তু চালচলনে মাঝবয়সি গুরুমশাই। জে.এন.