যেদিন রব না আমি

প্রিয়াংশু, এ ঘটনার পর থেকে একেবারে বদলে গেছে। স্তব্ধ হয়ে বসেছিল পাশেই আর অপলক দৃষ্টিতে দেওয়ালে বাবার ছবিটার দিকে চেয়ে রইল।

- তপন আইন

হার্ট অ্যাটাকের পর, পরিতোষ হালদারকে ঢাকুরিয়া ব্রিজের লাগোয়া একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রথমে আইসিইউ, পরে অবস্থার উন্নতি ঘটায় দুই বেডের কক্ষে ওনাকে রাখা হয়। সেন্ট্রালি এসি। ঝকঝকে তকতকে। পরিতোষ, দুগ্ধ ফেনলিভ শয্যায় শুয়ে ভাবছিল, ‘নাঃ! ছেলে-বউমা তাকে ভালো জায়গাতেই চিকিৎসা করাচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টা মনিটারিং চলছে। নার্স-সিস্টারদের অহরহ আনাগোনা তো আছেই। ঘরটি বেশ প্রশস্ত। ওপাশের বেডের রোগী সেদিন বলছিলেন, 'আমার তো ছুটি হয়ে যাবে। আপনার কবে?' পরিতোষ সামান্য কাত হয়ে বললেন, ‘ছুটি? কোথা থেকে? হাসপাতাল থেকে? ও হো, আমি তো ভাবছিলাম, এই পৃথিবী থেকে।

‘সেকী মশাই, এখনই চলে যেতে চাইছেন কেন?' ‘চলে তো যেতেই হবে। তবে আটাত্তর বছর বয়সে আবার বাড়ি ফিরে গিয়ে ছেলে-বউমা, গিন্নিকে জ্বালাতন করার কোনও মানে হয় না। জীবনে তো কত কিছুই দেখলাম।’ হা হা করে ভদ্রলোক হাসলেন। বললেন, 'তা বটে। তবে আমি কিন্তু আশি পার করেছি। এখনও সাধ-আহ্লাদ যায়নি। শুনুন মশাই, সাধ বলুন, আহ্লাদ কিংবা স্বপ্ন, এগুলোকে ধরে রাখতে হবে। তবেই দেখবেন বাঁচার তাগিদ বেড়ে যাবে।” পরিতোষ এবার হাসলেন। বললেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই ভালো চাকরিবাকরি করতেন। তাই না?'

‘তা বলতে পারেন, আমি একটা কোম্পানির মালিক।' “সেই জন্যই। সাধ-আহ্লাদ, কামনা, স্বপ্ন, সব কিন্তু মানিরিলেটেড। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখার দিন আর নেই।' “তা কেন। আপনার স্ত্রী, ছেলে-বউমা তো বেশ ভালোই। আপনার ছেলে-বউমা দু'জনেই তো ভালো কাজ করেন, তাই তো? আর আপনি’? ‘ছেলে-বউমা দু’জনেই আইটি-তে সিনিয়র ম্যানেজার। খারাপ বলব না, ভালোই ইনকাম। আমি মাছিমারা কেরানি। ছিলাম। স্যরি, মাছি নয়, মশামারা কেরানি।'