ঠাকুরবাড়ির র অন্দরমহলের সাহিত্যচর্চা ramadan

স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘দীপনির্বাণ’ আদায় করে নিল বিস্ময় ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত প্রার্থিত সম্মান। উপন্যাস ছাড়াও তাঁর লেখার ঝুলিতে রয়েছে কবিতা, গল্প, গাথা, রম্যরচনা প্রভৃতি।

কুয়াশার চাদর তখনও সম্পূর্ণ সরে যায়নি। খড়খড়ি সরিয়ে বাইরে খোলা আকাশ দেখার ইচ্ছাটুকুও কি ডানা মেলেছিল? না বোধহয়। পালকি সমেত জলে ডুবে গঙ্গাস্নান, ব্যস এটুকুই ছিল নারী স্বাধীনতার সীমা। সবে মাত্র নবজাগরণের ঢেউ এসে লেগেছে মহানগরীর বুকে। সেই ঢেউ সম্পূর্ণ আছড়ে না পড়লেও তার ভাঙা স্রোতটুকু নিবেদনের ভঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছিল জোড়াসাঁকোর সিংহদুয়ারে। সেই বাড়ির মায়াপুরীর ভিতরে কুয়াশার চাদর সরিয়ে রোদ ঝলমলে দিনের আলো স্পষ্ট হয়নি বটে, কিন্তু ঘোর রাত্রির অন্ধকার তত দিনে সম্ভবত কাটতে শুরু করে দিয়েছে। পরাধীনতার ভারী পর্দা সরিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ ঘটেছিল বাইরের মালিনীর। তার ঝোলায় তখন আলোর দিনের খোঁজ। সামনে এসে দাঁড়ালেন গিরীন্দ্রনাথের পূত্রবধু যোগমায়া দেবী। সেই ঝোলা থেকে বেছে নিলেন নবনারী, লায়লা মজনু, হাতিমতাই, পল ভার্জিনিয়ার অনুবাদ প্রভৃতি। জোড়াসাঁকোর অন্দরমহল তত দিনে পরিচিত হয়েছে শিশু বোধক, রামায়ণ-মহাভারতের সঙ্গে। ঠাকুরবাড়ির থামের আড়াল, খড়খড়ির ওপার থেকে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছিল ময়দানের খোলা হাওয়ায়, তেমনই তাঁরা নিজেদের প্রকাশ করেছিলেন ছাপার অক্ষরে।

জ্ঞানদানন্দিনী দেবী অন্দরের সব খড়খড়ি তুলে দিয়ে নবজাগরণের ঝড়কে প্রথম যিনি সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের অনুমতিক্রমে বিদেশে দুই বছর কাটিয়ে গাড়ি এসে দাঁড়াল ঠাকুরবাড়ির ফটকে। অপরূপ সাজে গাড়ি থেকে নামলেন রবীন্দ্রনাথের মেজ বৌঠান। সেই দিন থেকেই শুরু হয়েছিল মেয়েদের জয়যাত্রা। বাড়ির শিশুদের মনের খোঁজও রাখতেন এই মেজ বৌঠান। তাদের নিয়ে অন্দরমহল থেকে প্রকাশ করে ফেললেন এক আস্ত পত্রিকা। নাম, ‘বালক'। সুধীন্দ্র, বলেন্দ্র, সরলা, প্রতিভা, ইন্দিরা ঠাকুরবাড়ির অনেকেরই সাহিত্যে প্রথম হাতেখড়ি হয় এই পত্রিকায়। সম্পাদকের লেখা কেবল একটিই প্রকাশ পায় – ‘আশ্চর্য পলায়ন'। ডেবাগোবিও মোগ্রিয়েভিচ্-এর সাইবেরিয়া থেকে পালানোর রোমাঞ্চকর কাহিনি ‘কনটেম্পোরারি রিভিউ’এর