ফেরা

মঞ্জুলার ফিরে যেতে যেতে অমলেন্দুর জীবন যায়। শহরের বাসতা ছেড়ে অমলেন্দু মঞ্জুলার সঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পাঞ্চা, মঞ্জুলার স্বামী, এবং গ্রামবাসীরা খুঁজে বের করার জন্য এই অপ্রত্যাশিত বন্ধুর কথা বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সরল জীবনযাত্রা অমলেন্দু নতুন করে বাঁচার মধ্যে খুঁজে পান। এই গল্পটি মানুষে মানুষে সম্পর্ক, দায়বদ্ধতা এবং নতুন শুরু শক্তি এক মর্মস্পর্শী উদাহরণ।

- মৃত্তিকা মাইতি

মঞ্জুলা বরাবরের জন্য গ্রামে ফিরে যাবে শুনে অমলেন্দু রায় চুপ করে গেলেন। রোজের মতো বাজারে গিয়েছেন, খাওয়া-দাওয়াও করছেন, সারাদিন আরও যা যা করেন সবই করছেন কিন্তু কোনও কথা বলছেন না।

মঞ্জুলা বুঝতে পারে সবই। কিন্তু সেও নিরুপায়। নিজের সংসারের প্রয়োজনে একদিন তাকে চলে আসতে হয়েছিল কলকাতায়। জীবনের প্রায় তেইশ বছর পার করে ফেলেছে অন্যের ঘর সামলাতে। বাবুদের বাড়ি বাসন মাজা, ঘর মোছা, রান্না করা, কারও আবার বাচ্চা সামলানো। একটা সংসারে যত রকমের কাজ হয়। অত করেও কখনও কারও ঘরের একজন হয়ে উঠতে পারেনি। তারা মুখে যতই বলুক ‘পরিবারের একজন', বাইরে পরিচয় দেওয়ার সময় বলতে হয়, ‘আমাদের বাড়ির কাজের লোক।' কথাটা শুনে বুকের মধ্যে মোচড় দিত। তারপর ভাবত, কীসের কষ্ট? গতর খাটায়, বদলে পয়সা নেয়। নিজের মনে তো জানে, সেও কারও বউ, কারও মা, সত্যিকারের একটা সংসার তারও আছে। মঞ্জুলার বর পঞ্চা কর চাষবাস করত। অন্যের জমিতে ধানকাটার কাজও করত। ফাঁকে ফাঁকে ছিল গাছ ঝুড়ার কাজ। গ্রামে কেউ কোনও গাছের ডাল কাটবে কী তেঁতুল পাড়বে— ডাক পড়ত পঞ্চার। নারকেল গাছ ঝুড়ার কাজ তো ছিল বাঁধা। সেই গাছ থেকেই একদিন পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ায় চোট পেল। ডাক্তার বলে দিল, গাছে কোনওদিনই আর উঠতে পারবে না। ভারী কাজ করাও বারণ।

ছোট ছোট দুই মেয়ে আর কোলের ছেলেকে ফেলে মঞ্জুলাকে পাড়ি দিতে হয়েছিল অজানা শহরে। তখন মঞ্জুলার বয়স এই সাতাশ আঠাশ হবে। গ্রাম, ঘর, স্বামী-সন্তানের দুঃখ ভুলতে সন্ধে থেকে রাত কাজে ব্যস্ত রাখত নিজেকে। ছ'মাস কী বছরে একবার বাড়ি যেত। দিন সাতেক থেকে আবারও সেই নাড়ি ছেঁড়ার যন্ত্রণা নিয়ে চড়ে বসতে হতো বাসে।