মায়াময় মিজ়োরাম

নীল-সবুজ রঙের আঁকিবুকি খেলার উপর চাদর বিছিয়ে রাখে মেঘ। চন্দনরঙা রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে চলে ঝরনা। মিজোরামের রূপ-বর্ণনা করলেন অনুভা নাথ।

টা না দু'বছর ধরে কোভিড নামক রিং মাস্টারের অঙ্গুলি হেলনের যাতনায় অস্থির হয়ে শেষে বেরিয়ে পড়লাম মিজোরাম ভ্রমণে। দুপুর একটা নাগাদ পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এয়ারপোর্ট লেনপুইয়ে যখন নামলাম, তখন দূরের ঘন নীল পাহাড়ের সিলুয়েটে সবুজ গাছের উপর মেঘের চাদর দেখে মনে হচ্ছিল, দক্ষ শিল্পী নিজস্ব খেয়ালে চলমান ছবি আঁকছেন। মিজ়োরামের লেনপুই এয়ারপোর্টে ইনার লাইন পারমিটের ঝক্কি মিটিয়ে গাড়িতে চাপলাম, গন্তব্য মিজ়োরামের রাজধানী আইজ়ল। পাহাড়ের সরু হেয়ার পিন বেন্ড জুড়ে ছড়ানো পথই বলে দিচ্ছিল, আইজ়লকে কেন ‘হোম অফ হাইল্যান্ডার্স’ বলা হয়। পাহাড়ের গায়ের বুনো গন্ধ, রাস্তার উপর গড়িয়ে পড়া উচ্ছল ঝর্না আর মঙ্গোলয়েড চেহারার মানুষদের মধ্যে নিজেকে বড় অপাংক্তেয় বলে মনে হচ্ছিল। যেন আইজ়ল শহরটি তার নিজের মধ্যেই পরিপূর্ণ। তার আর বাইরের কোনও মানুষকে প্রয়োজন নেই। মহিলারা তাদের শিশুদের ওড়না দিয়ে শক্ত করে পিঠে বেঁধে নিয়েছেন। এখানে মহিলারা মোটা কাপড়ের তৈরি একটি পরিধান পরেন। এটিকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘কুয়ান’। সন্ধ্যায় হোটেলে কাচের গায়ে লেগে থাকা আইজলের আলো মাখা রূপ দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, বুঝি এটা কোনও এক মহাশূন্য, সামনের আলোগুলো নক্ষত্র কুচি। এমন জাগতিক সৌন্দর্যের কাছে বার বার নতজানু হতে ইচ্ছে করে।

পরের দিন, সকালে গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম রেইকের উদ্দেশে। আইজ়ল থেকে রেইকের দূরত্ব প্রায় উনত্রিশ কিলোমিটার, পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা। পাহাড়ি জায়গার বিশেষত্ব হল, গন্তব্যের চেয়ে যাতায়াতের রাস্তাগুলোই হয় দ্রষ্টব্য। পাহাড়ের ঢাল, তার গায়ে গায়ে মাফলারের মতো লেগে থাকা আদুরে মেঘ। কখনও চড়াই, কখনও উতরাই। পথে দেখে নিলাম ভাইপুহান ফো৷ ‘ফো’ কথাটির মানে হল জলপ্রপাত। আমাদের মিজো ড্রাইভার বলল, এই ঝর্নাটি উপরের দিকে অনেকটা পথ পাহাড়ের সমতলের মধ্যে দিয়ে বয়ে এসে ক্রমশ নিচের দিকে নেমেছে। সেখানে পৌঁছাতে গেলে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। মিনিট কয়েক মাঝারি ঝোপঝাড়ের মধ্যে