সঞ্জয় দুবরির জঙ্গলে

শহুরে সভ্যতা থেকে অনেক দূরে, অরণ্যের অপার্থিব শান্তি। কখনও বা বাঘ-ভালুক দেখে ফেলার রোমাঞ্চ! গা-ছমছমে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনে সুচেতনা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী।

ঘড়ির কাঁটা দশটার ঘর অতিক্রম করল না, অথচ ব্রহ্মাণ্ডের এই ভূখণ্ড একখানা অগ্নিপিণ্ডের রূপ ধারণ করে বাতাসে এক ভয়াবহ উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে, ভাষান্তরে যাকে আমরা ‘লু’ বলে থাকি। মধ্যপ্রদেশের ঘন জঙ্গল সঞ্জয় দুবরি ন্যাশনাল পার্কের দুবরি রেঞ্জ ছেড়ে জিপসি বাসতুয়া রেঞ্জের দিকে এগিয়ে চলেছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। কোথাও ছোট ছোট গ্রাম, কোথাও প্রান্তর খাঁ খাঁ করছে মে মাসের আসন্ন দুপুরের চিন্তায়!

বাতাসে এই ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার কারণ কি শুধুই তাপমাত্রার পারদ? একেবারেই না। মোহনের গুহায় যাওয়ার আনন্দ আর উত্তেজনা যে তার দ্বিগুণ! মোহনের ছবি দেখে মনে হয়েছিল, ওর বংশধরদের কাউকে কাউকে কি আমরা এর আগে দেখেছি? আলিপুর চিড়িয়াখানায়? নন্দনকাননের হোয়াইট টাইগার সাফারিতে? হ্যাঁ, দেখেছি তো বটেই!

বাসতুয়া রেঞ্জের একটা বড়সড় গুহাতে মোহনকে প্রথম পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৫১ সালে রেওয়ার মহারাজা একদিন বান্ধবগড়ে শিকার করতে করতে এক বাঘিনিকে তার সন্তানসহ শিকার করেন। বাঘিনির ন'টি সন্তানের মধ্যে একটা সাদা বাঘ ছিল। শিকারের সময় দেখা মাত্রই মহারাজ ওকে গোবিন্দগড়ে নিয়ে যান। সেখানে বহু দিনের চেষ্টায় মোহন আরও চারটে সাদা বাঘের বাবা হয়। এর পর তাদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এ ভাবেই সারা পৃথিবীতে সাদা বাঘ ছড়িয়ে পড়ে। ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' চ্যানেল মোহনের কাহিনি সম্প্রচার করেছে। যার টাইটেল ছিল ‘গ্রেট জু'স অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ১৯৭০'।