বিস্মৃতির অতলে

কথায় বলে স্মৃতি সততই মধুর। কিন্তু এই স্মৃতিরাই যদি আবছা হতে শুরু করে তখনই তাকে অসুখের নাম দিতে হয়। এমনই কিছু স্মৃতিজনিত অসুখ নিয়ে আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা। কলমে দেবলীনা অধিকারী ও উপমা মুখোপাধ্যায়।

বা বার বয়স ৭০ পেরিয়েছে। বয়সজনিত টুকটাক সমস্যা ছাড়া আর তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা কোনও দিন ছিল না তাঁর। কিন্তু ইদানীং কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করেন। কিছুই মনে রাখতে পারেন না। টিভি দেখেন, কিন্তু ‘কী দেখলে?' জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে পারেন না। মা-কে দেখলে চিনতে পারেন না, সন্তানদের চিনতে পারেন না। অথচ বহু পুরনো অনেক কথা অনর্গল বলে চলেন। বয়স্ক মানুষদের সম্পর্কে এমন অভিযোগ তাঁদের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনেন চিকিৎসকরা। এই ভুলে যাওয়া বা ব্যক্তিত্বে অসঙ্গতির কারণ হতে পারে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার সমস্যা। এই প্রতিবেদনে আমরা মূলত আলোচনা করব ডিমেনশিয়া, অ্যামনেশিয়া ও শর্ট টার্ম মেমরি লস নিয়ে। খুঁজব ভাল থাকার উপায়।

ডিমেনশিয়া সোজা ভাষায় বললে বলতে হয়, এ হল স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলার রোগ। এই হারানো এমন যে, ধীরে ধীরে মানুষ নিজের দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। এই অসুখের প্রধান কারণ মস্তিষ্কের শিরা উপশিরাগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসা। একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও মস্তিষ্কে ছোটছোট স্ট্রোক হওয়ার জন্যও অনেকে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এর অনেক প্রকার আছে। সেই হিসেবে ডিমেনশিয়া শব্দবন্ধকে একটি ‘আমব্রেলা টার্ম' হিসেবেও উল্লেখ করা যেতে পারে। ডিমেনশিয়া কিন্তু কেবলমাত্র স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সমস্যা নয়, এতে অন্যান্য কগনিটিভ ফাংশনেও সমস্যা তৈরি হয়। এই কগনিটিভ ফাংশন পশুর চেয়ে আমাদের আলাদা করে। ভাষা বোঝা, কোনও কাজের প্ল্যান করা, বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা বা কোনও বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হওয়া— এ সবই আমাদের কগনিটিভ ফাংশনের মধ্যে পড়ে। ডিমেনশিয়ায় ব্রেনের নিও-কর্টেক্স অংশটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে উচিত-অনুচিতের পার্থক্য ধরতে পারা দুরূহ হয়ে ওঠে। কোনও ভাষা লেখা বা শোনার ক্ষমতা ও চলে যেতে পারে ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে।

অ্যালঝাইমার'স ডিমেনশিয়া: বিভিন্ন ধরনের ডিমেনশিয়ার মধ্যে যে ধরনটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়, তারই নাম অ্যালঝাইমার'স ডিমেনশিয়া।