মায়ানমারের রূপকথায়

ভারতের পূর্ব প্রতিবেশী মায়ানমার। রাজনৈতিক অঙ্গনে যতখানি উজ্জ্বল, ভ্রমণ সৌন্দর্যে কোথাও যেন কাব্যে উপেক্ষিত। ইতিহাস ও সাহিত্যের বর্মা মুলুককে ফিরে দেখলেন অগ্নি রায়।

সঙ্গে রোদচশমা আনা হয়নি বলে এখন আফশোসই হচ্ছে। অথচ গতকাল আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী বিদেশমন্ত্রকের এক জুনিয়র অফিসার যেপরামর্শ দিয়েছিলেন, শোনা উচিত ছিল। তিনি আগে মায়ানমারে বেশ কয়েকবার এসেছেনই নয়, এই দেশের ইতিহাসভূগোল বিশেষজ্ঞও বটে। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছোঁয়নি এখনও, কিন্তু সূর্য মাঝমাঠে খেলছে। আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। দমসম অবস্থা, রক্ত জল। তার মধ্যে চোখ ঝলসাচ্ছে আক্ষরিক অর্থেই সোনা ঝরানো রোদ্দুরে।

এসে দাঁড়িয়েছি আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসবিধুর ইয়াঙ্গনের কেন্দ্রে অবস্থিত শ্বেদাগন প্যাগোডার সামনে। সোনা দিয়ে মোড়া, সাড়ে তিনশো ফুট উঁচু এই প্যাগোডার চূড়া থেকে রোদ্দুর ঠিকরে আসছে। টেলিস্কোপে চোখ রাখলে দেখা যায় তার শীর্ষদেশে হিরে-জহরতের মিনে করা। কত উপকথা আর প্রজন্মবাহিত কাহিনি এই প্যাগোডাকে ঘিরে বুদ্ধসার্কিটে। এই কিংবদন্তি ভরা প্যাগোডায় সর্বদা এতটাই শান্তি বিরাজমান যে লোকমুখে তৈরি হওয়া মিথ, ব্রিটিশ কলোনির সময় এখানে নাকি বাঘেরা আসত দু’দণ্ডের বিশ্রাম নিতে! বর্মা মুলুকে পা দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। কিন্তু এখনই এর মায়ায় আচ্ছন্ন দশা। ইয়াঙ্গনের আম, কাঁঠাল, কলা, অশ্বত্থ, হিজলের পাতায় এসে ঝাপটা মারছে প্রতিবেশি বাংলাদেশের বাতাস। দুই পড়শির ভূগোলেও যে কী মিল! ন্যারো গেজ-এর রেললাইন দৌড় দিয়েছে মান্দালয়ের দিকে। আর তার পাশেই ঝাঁ চকচকে রাজপথে শিস কেটে আগে পিছে চলছে জলপাই রংয়ের সামরিক ট্রাক। ইতিহাসের চাকা ঘোরে। সেই চাকায় লেগে থাকা অতীতের ধুলো ফিরে আসে। আমার এই বর্মা সফর ছিল এ পি জে আব্দুল কালামের প্রেসিডেন্ট থাকার সময়, তাঁরই সফরসঙ্গী সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে। সেই সেনা শহর মাঝেমধ্যে গণতন্ত্রের বাহারি পোশাক পরার পর, আজ আরও তীব্র। সেনার বুটের দাগ আরও গভীর, সাইরেনের শব্দ আরও তীক্ষ্ণ, রোহিঙ্গাদের উপর সেনা নির্যাতন এবং তাদের রাখাইন প্রদেশ থেকে তাড়ানোর ঘটনা তো আরও পরের।