অনুপম খেরের বাঁধানো দাঁত

তোমরা দু’জনেই আমাকে ‘অনুপম খের’ বলে ডাকবে।” দু'জনেই মৃদু হেসে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল

- সাধন দাস

তাহার কথা নিজের কথা বলি। বয়স আমার অল্প। একজনের মন ছুঁয়েছিল আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া। তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে। ভুলে গিয়েছিলাম অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি। আমার মতো এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে। অল্প বয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে। শরৎবাবু তুমি মহাশয় বটে। পঁয়ত্রিশ বছরের এলোকেশীকে জিতিয়ে দিলে, মহানায়িকা দিলে বানিয়ে। আমাকে কেন তুমি দিলে হারিয়ে। মনে করো তার নাম পৃথ্বীরাজ। সারা কলকাতায় সে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়াত। সুঠাম দেহ, অ্যাথলিট চেহারা। সাইকেলই তার ধ্যান-জ্ঞান। অবিরাম সাইকেল চালিয়ে সে হল বিজয়ী। ছিনিয়ে নিল বহু পুরস্কার। বুকের মাঝে সেফটি পিনে সাঁটা টাকার মালা। তখনকার দিনে যা দস্তুর। কাঁচা বয়সের জাদু লাগে আমার চোখে। মন যায় না সত্যের খোঁজে। আমি বিকিয়ে যাই মরীচিকার দামে। পৃথ্বীরাজ বলেছিল, কেউ নাকি তার চোখে পড়েনি আমার মতো। এত বড় কথাটা যে বিশ্বাস করব, সে সাহস হয় না। না করব এমন জোর নেই। সে আমাকে স্বপ্ন দেখাত সারা বাংলা তথা ভারত তথা সারা বিশ্ব জয় করবে সাইকেল চালিয়ে। তার পর সংক্ষিপ্ত জীবন। তার সঙ্গে বার হলাম সুখের সন্ধানে। তুমিই আমরা চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নায়িকা।

আমারও মনে হল সুন্দর সে পুরুষ বিশ্ব করবে জয় অনায়াসে। আমি তখন মোহ-মূর্ছনায় মুগ্ধ। এল অতল জলের আহ্বান। বলল, ‘চলো ঘর বাঁধি।' ঘর ছেড়ে ঘর বাঁধতে চললাম। সারা বিশ্ব তার হাতের মুঠোয়। বিশ্ব জয়ে কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন। আমি রোমাঞ্চিত, উচ্ছ্বসিত, প্রেমের আগুনে দগ্ধ। সে বলল,‘তুমি তো মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। এমনিতেই তো তোমার প্রচুর গয়না প্রাপ্য। আপাতত তোমার মায়ের সমস্ত গয়না নিয়ে এসো। তার পর আমাদের দেখে কে? সারা বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়! এটা তার সাময়িক ব্যবস্থা।' কিছু দিন যুগলে ঘুরলাম, ফিরলাম। তার পর বাঁধা ঘর ছেড়ে গেলাম নিজের ঘরে আমার প্রাপ্য গয়না আনতে। কিন্তু বাঁধা পড়ে গেলাম নিজের ঘরে। ঘর বন্দি হলাম। বেরোনো বন্ধ, স্কুল বন্ধ। বুঝলাম কাঁচা বয়সে আমায় মরণ দশা ধরেছিল।