ভুলে যাওয়া মানেই ডিমেনশিয়া নয়

যেসব রোগ সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা আমাদের রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ডিমেনশিয়া। এই অসুখ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস-এর অধ্যাপক ডাঃ শৌভিক দুবে

ঘটনা ১ সমীরণববাবু বাজার করতে গিয়ে প্রায়ই এটা ওটা রাস্তায় হারিয়ে আসেন। কখনও ভোলেন চশমা, কখনও আবার টাকার ব্যাগ বা মোবাইল ফোন। ছোটবেলা থেকেই জিনিস ভোলার রোগ রয়েছে সমীরণবাবুর।

ঘটনা ২ অতসীদেবীর কথাই ধরা যাক। রোজ হা হা হি হি, আড্ডা, গান দিয়ে বাড়িটা একেবারে মাতিয়ে রাখেন তিনি। কিন্তু সপ্তাহখানেক হল কেমন যেন গম্ভীর হয়ে রয়েছেন। কারও সঙ্গেই বেশি কথা বলছেন না। বিরক্ত হচ্ছেন গানবাজনায়! বাড়ির ঠিকে কাজের মেয়েটিও ভয়ে বেশি সামনে ঘেঁষছে না। তেমন কোনও বড় ঘটনা না ঘটলেও মায়ের এমন পাল্টে যাওয়ায় অবাক ছেলেমেয়েরা!

রোগ চিনুন সাধারণ মানুষ, এমনকী, আমরাও যখন ডাক্তার হইনি, তখন আমরাও ভাবতাম, একটা বয়সের পর নিত্যজীবনে টুকিটাকি নানা কিছু ভুলে যাওয়াই ‘ডিমেনশিয়া’। যখন চিকিৎসক হওয়ার পাঠ নিলাম, তখন বুঝলাম, ‘ভুলে যাওয়া’-ই একমাত্র ডিমেনশিয়া রোগের লক্ষণ— এমন ধরে নিলে তা মস্ত ভুল হবে। দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজ আপনি-আমিও প্রায়ই ভুলে যাই। তাই সেটিকেই ডিমেনশিয়া বলে দেগে দেওয়া যাবে না। যেমন, উপরের ঘটনায় ভুলোমনা সমীরণবাবু কিন্তু ডিমেনশিয়ার রোগী নন। ভুলে যাওয়া তাঁর স্বভাব। কিন্তু অতসীদেবী কিছু না ভুললেও পাল্টে যাচ্ছেন। বিপরীত মানুষ হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে তিনি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ধরে নেওয়া যেতেই পারে। একজন ডিমেনশিয়া রোগীর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে ব্যবহারগত কিছু পার্থক্য দেখা যায়। ভুলে যাওয়ার চেয়ে বরং প্রাথমিকভাবে এই ব্যবহারগত পরিবর্তন নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। ডিমেনশিয়া হানা দিলে রোগীর বাড়ির সদস্য বা দেখভাল করার লোকজন— কারও না কারও চোখে এই ব্যবহারিক পরিবর্তনগুলো ধরা পড়বেই।

• হয়তো দেখা গেল একজন খুব হাসিখুশি, হুল্লোড় করা মানুষ হঠাৎ কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। চারপাশের বিভিন্ন বিষয় থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।

 • আগে খুব সচেতনতার প্রমাণ দিলেও ইদানীং পারিপার্শ্বিক বিচার করে কোথায় কী বলা উচিত, তা বুঝে বলে উঠতে পারছেন না। কিংবা এমন কিছু বলে ফেলছেন, যা ওই স্থানে না বলাই ভালো।