জারোয়াদের ডাক্তার পদ্মশ্রী বাঙালি রতনচন্দ্র কর

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ৭০০ বর্গ কিমি জঙ্গলে বাস করে আদিম জারোয়া জনজাতি। সভ্য জগৎ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন তাঁরা। বিরক্ত বোধ করলে বিষাক্ত তির ছুঁড়তেও দ্বিধা করেন না। সেই জঙ্গলের গভীরে থাকা হাসপাতালে যোগ দেওয়ার চিঠি হাতে পেলেন এক বাঙালি চিকিৎসক। বাকিটা রোমাঞ্চকর কাহিনি। লিখেছেন ভিক্টর বাগ।

জরোয়াদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ মিলেছে বারবার। আজকের চিকিৎসকরা শহর ছেড়ে সামান্য গ্রামে যেতেই অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। কত কত কারণ দেখিয়ে তাঁরা গ্রামের পোস্টিং এড়িয়ে যেতে চান। অথচ সেই কবে বাঙালি চিকিৎসক রতনচন্দ্র কর পৌঁছে গিয়েছিলেন কালাপানির দেশ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। শুধু পৌঁছে যাওয়াই নয়, স্থানীয় জারোয়া জনগোষ্ঠীর মানুষের চিকিৎসার গুরুদায়িত্ব বর্তেছিল তাঁর কাঁধে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। তাঁর এই অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ভুল করেনি দেশ। বাঙালি চিকিৎসক রতনচন্দ্র করকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

কে এই রতনচন্দ্র কর? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বিস্তৃত এক জীবন নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা রতনচন্দ্র কর এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তনী। তিনি এখন বেঙ্গালুরুতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকেন। সেখান থেকে জানান, ‘রাষ্ট্রপতির থেকে এমন একটি পুরস্কার পাওয়া সত্যিই বিরাট অভিজ্ঞতা। আমার ও আমার পরিবারের জন্য এই পুরস্কার অনেক বড় সম্মান'। চিকিৎসক রতনচন্দ্র করের বয়স এখন

৬৬। সুদীর্ঘ কর্মজীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় তাঁর কেটেছে আন্দামানে। প্রথমেই জারোয়াদের ভাষা শিখে নিয়েছিলেন। ভাষা শিক্ষার মাধ্যমেই তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন বাঙালি চিকিৎসক। মোটামুটি চার থেকে পাঁচ মাস সময় লেগেছিল এই ভাষা শিখতে। জারোয়াভূমে কীভাবে এসে পড়লেন এই বাঙালি চিকিৎসক? জানা যাচ্ছে, ডাঃ রতনচন্দ্র কর ১৯৮৮ সালে আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসনের স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগদান করেছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে জারোয়া জনজাতির স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর লেখা ‘আন্দামানের জনজাতি জারোয়া’ বইটি জারোয়াদের জীবন ও সমাজ নিয়ে লিখিত এসময়ের সবচেয়ে তথ্যমূলক গ্রন্থ। সেই বইতেই ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে জারোয়াদের নিয়ে নানা চমকপ্রদ ঘটনা। যেমন—স্বাধীনতার পরে প্রশাসনের সঙ্গে অর্ধশতাব্দী ধরে জারোয়াদের প্রায়শই গোলমাল চলে। এমন দুটি ঘটনার উল্লেখ করা হল।