টোটো পাড়ায় কয়েকদিন

বর্তমানে অবশ্য সংখ্যাটা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। সচেতনতা, সরকারি উদ্যোগের ফলে বিপন্ন এই জনজাতি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

- সৌমেন জানা

গড়পড়তা বাঙালির চেনা গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে একটু বন্যতার স্বাদ নিতে পৌঁছেছিলাম ডুয়ার্সের টোটোপাড়ায়। আধুনিকতার সঙ্গে লড়তে থাকা ক্রমশ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া টোটোদের জীবনে ডুব দিয়েছিলাম কয়েকটা দিন।

ঘড়িবাঁধা জীবনের গৎবাঁধা রুটিনকে ফাঁকি ‘মোরা দিনে করি বাবুগিরি, রাতে আয়েসে ঘুমাই'— এই জীবনধর্ম তো হোমসিক বাঙালির মজ্জাগত। ছুটির দিনে গা এলিয়ে ল্যাদ খেতে চায়। কিন্তু এখন সেই অবকাশটুকু কোথায়? চিরতার জল গেলার মতো বাধ্যতই কর্পোরেট দিনলিপিতে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা ধরে রোবটের মতো যাপন। ক্লান্ত জীবনের এই ক্যাকোফোনি থেকে মুক্তি পেতে তাই আমরা ছুটে যাই উত্তরবঙ্গে। কিন্তু বাঙালির কাছে উত্তরবঙ্গ মানে কী? শ্বেতশুভ্র হিম টোপর পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা। একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে উষ্ণ চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া! না; তা ঠিক নয়। উত্তরবঙ্গ মানে লাজুক নয়নে চেয়ে থাকা ডুয়ার্স। জঙ্গল, বন্যপ্রাণ আর নদীর জীবন্ত ক্যালেন্ডার। সবুজের মাঝে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, কয়েক ঘর বসতি, সারল্য মাখা শিশুর মতো প্রাণচঞ্চল তারা। এখানে উচ্ছল নদী, চির নবীন জঙ্গল আর পাহাড়িয়া গ্রামেরা হাত ধরাধরি করে থাকে। এগুলো শুধুমাত্র । অনুভূতিই চিনতে পারে! দরকার অনুভবের। আধখোলা জানলার কাচের ফাঁক দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে এসে বিঁধল। আচম্বিতে ঘোরটা কেটে গেল। ঘণ্টাখানেক আগেও গাড়ি করে যখন আলিপুরদুয়ার শহর থেকে বেরচ্ছি তখন আকাশে মেঘ কালো করে এসেছে। প্রকৃতি যেন স্বাগত জানাল। ফিসফিসিয়ে বলে গেল ‘এসো, দেখ, জানো, মিশে যাও আমার সঙ্গে।' ঘটনাচক্রে এক ঝিরঝিরে বৃষ্টির দিনে, যেমন দিনে গড়পড়তা বাঙালি ল্যাদ খেতে চাইবে তেমন দিনেই চলেছি ডুয়ার্সের টোটোপাড়ায়। একটু অন্যরকম জায়গার সন্ধানে।