পরবাসী

ওই তো, আসগরদাদা ডেস্টিনি থেকে নিজের মঞ্জিলে যাচ্ছেন। অলঙ্করণ : সুব্রত মাজী

- সুন্দর মুখোপাধ্যায়

জনাব আসগর আলি সাহেব বললেন “বেটা আফশোস, আমি তোমাকে ‘মঞ্জিল’ দেখাতে পারলাম না।” খিদিরপুরের যে রেস্তরাঁয় তার সঙ্গে বসেছিলাম সেটা একটা ঘিঞ্জি মহল্লা। সামনের ফুটপাতে কর্পোরেশনের কল খোলা, দুএকটা বাচ্চা জলে হুটোপাটি করছে। একজন জোয়ান মদ্দ কাঁধে গামছা নিয়ে ভর সন্ধেবেলায় ব্রাশ করছিল, মুখ ভর্তি ফেনা।

গল্প বলার মুডে আসগর সাহেব ‘মঞ্জিল' থেকে সরাসরি চলে এলেন কায়রোর রেস্তরাঁয়। বললেন 'বেটা স্টিফেন সাহেবের খুব পছন্দ ছিল কায়রোর সিরাজ রেস্তরাঁ। এর মালিকের বাড়ি ছিল ইরানের বাগিচা শহর সিরাজে। রেস্তরাঁর আদব কায়দা, খানা, সবই ছিল খাস। একদম আলগ।' আমরা খাসির ভুনা নিয়েছিলাম। সঙ্গে দু-পিস পাউরুটি। পাউরুটিগুলো সেঁকে দেয়নি। আসগর সাহেব ছোঁ মেরে আমার প্লেট থেকে পাউরুটি দু'খানা তুলে হাঁক পাড়লেন সেলিম ভাই। চেক লুঙির ওপর পাঞ্জাবি পরা সেলিম ভাই এসে দাঁড়াতেই আসগর সাহেব বললেন ‘কোই ভি এক আচ্ছা, তুমহারা পসন্দ কী গানা ইয়াদ কর।'

সেলিম একখানা বড় রুমালে হাত মুছতে মুছতে ভীষণ অবাক হয়ে বলল, —'গানা?' আসগর সাহেব বললেন, —'হাঁ হাঁ, গানা, রফি সাহাব কী উও গানা ইয়াদ হায় ? লিখে যো খত তুঝে, ও তেরি ইয়াদ মে, হাজারো রংগে, নজারে বন গয়ে...।' সেলিম হাঁ করে তাকিয়ে রইল। আসগর সাহেব পাউরুটির পিসটা চোখের সামনে তুলে মুখে বেশ একখানা সমঝদারের ভঙ্গি এনে বললেন, ——ইয়ে তেরি খত অব মেরে হাতো মে, লেকিন ইয়ার....

কাঁহা কোই রং...!' সেলিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনই রইল। আলি সাহেব বললেন, ——চুলার ওপর গরম শিকে পাউরুটির এক পিস দাও, সাথ রফি সাহাবকে এক কলি সুর ভাঁজো, ব্যস, এক হি কলি, জাদা নেহি...ফির উও পিস উলট দো। ফির দুসরা কলি। অব দেখো পাউরোটি তৈয়ার...।'