এখানে আকাশ নীল

একটি বৃষ্টিভেজা বিকেলে, বিমানবিহারী আর জুঁইয়ের মধ্যে মিষ্টি কথোপকথন। চায়ের আড্ডায় ভাগ হয়ে যায় সময়, যেখানে সম্পর্কের স্নেহ, প্রগাঢ় বন্ধুত্ব এবং হারানো স্মৃতির কথা উঠে আসে। নানা ছোট ছোট আনন্দের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের গভীরতা, যেখানে জীবন, সম্পর্ক ও বয়সের কথা মিলে তৈরি হয় এক অপূর্ব রূপকথা।

- শাশ্বতী চন্দ

বা তাসে জড়িয়ে আছে ভেজা আরাম। দূরে কোথাও কি বৃষ্টি হচ্ছে? হতেই পারে। বিকেলের রোদে মেদুর একটা ছায়া এসে পড়েছে। এখন আকাশ মেঘের সাজ পরে ফেললেই কেল্লাফতে। উৎফুল্ল গলায় হাঁক দিলেন বিমানবিহারী, ‘চায়ের জল বসাবি নাকি, ও জুঁই? ব্যালকনিতে বসে বাপ বেটিতে বৃষ্টি দেখব আর চা খাব। তুই বর্ষার গান গাইবি। আর আমি তাল দেব। ওই গানটা গাইবি নাকি, ওই যে, মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে?” গেলাম।' “কোথায় আঁধার? কোথায় মেঘ? গরমে জ্বলেপুড়ে

রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে জুঁই, 'এখনও বেরওনি যে হাঁটতে? শোনো, ফেরার পথে নাথুনির দোকান হয়ে এসো। দুটো শাড়ি দেওয়া আছে।'

- “ওয়েদার রিপোর্ট বলছে, ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বিকেলের দিকে। আজ না হয় না গেলাম। চারদিকে জ্বরজারি হচ্ছে। ভিজলে, এই বুড়ো শরীরে সইবে না, বুঝছিস না কেন! তাছাড়া, মর্নিংওয়াক তো করেছি।'

‘না বাবা। সুগার চারশো চল্লিশ। দু'বেলাই হাঁটতে হবে। তেমন মনে হলে, ছাতা নিয়ে যাও। তবু যাও। সুস্থ তো থাকতে হবে, তোমার কিছু হলে আমি যে চোখে অন্ধকার দেখি। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে, বল!”

জুঁইয়ের মুখের দিকে দু'মিনিট তাকিয়ে থাকেন বিমানবিহা চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। অস্বস্তি কাটাতে ব্যস্ত গলায় বলে ওঠেন, ‘আমার ছাতাটা — হ্যাঁ রে, কোথায় যেন রেখেছিলাম কাল... এই তো এখানে, ডিমের চপ খাবি নাকি? নিয়ে আসব?'

উৎফুল্ল হওয়ার চেষ্টায় গলায় হাসি আনে জুঁই, ‘এনো। তোমার কথামতো বৃষ্টি যদি নামে, খিচুড়ি কনফার্মড। সঙ্গে বেগুনি আর অমলেট। একবেলার অনিয়ম না হয় কাল বেশি হেঁটে পুষিয়ে দিও।'

রাস্তায় নেমে আসেন বিমানবিহারী। মিনিট পনেরো আগে, ইভনিং ওয়াকের সঙ্গী শ্যামাচরণবাবু ডাক দিয়েছিলেন, সে কথা মনে পড়ে। আফশোস হয়। তখন বেরলে এখন আর একা একা হাঁটতে হতো না। দিব্যি কথা বলতে বলতে যাওয়া যেত। যেমন যান রোজ। ফাঁকিবাজি করতে গিয়ে ফাঁকিতে পড়েছেন। আচ্ছা, গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে শর্টকাট করলে হয় না? তবে হয়তো শ্যামাচরণবাবুকে ধরে ফেলা যেতেও পারে। তিনি নিশ্চয়ই রোজকার মতো বাজারের ভেতরের রাস্তা দিয়েই গিয়েছেন। যতক্ষণে শ্যামাচরণ স্টেশন রোডে উঠবেন, তার আগেই নিশ্চয়ই পৌঁছে যেতে পারবেন। উৎসাহের সঙ্গে পা চালান