আখ্যানের দর্পণে প্রতিবিম্বিত সমকাল

গল্পগুলির পাঠ-অভিজ্ঞতা এক অনাবিল আনন্দের সমুদ্রে অবগাহনের সঙ্গে তুলনীয়। ক্যালাইডোস্কোপের মধ্য দিয়ে যেমন রংবাহারি নকশার সৌন্দর্য দেখা যায়, তেমনই গল্পগুলির নতুনত্ব ও গভীরতা উন্মোচিত করে আলোর রোশনাই।

- 'গল্পসংখ্যা' প্রসঙ্গে (সম্পাদকীয়, জানুয়ারি ২০২৫) কয়েকটি প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চেয়ে এই পত্র। ভারত তথা বাংলার অর্থনীতি বাস্তবে ইংরেজি নববর্ষের সঙ্গে জড়িত ঠিকই, এ-কথাও ঠিক যে ইংরেজি নববর্ষের সূচনালগ্নে শীত ও ছুটির আমেজ বিনোদনের এক আলাদা মেজাজ তৈরি করে। এ জন্য ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারের অপরিহার্য প্রভাব হয়তো বেড়েই চলেছে। তবে বাংলা-বাঙালির গল্প-সাহিত্যে বাংলার ঋতুনির্ভর কাল-প্রকৃতি ও জীবন-জীবিকার আবেদন এখনও অপরিসীম। এ জন্য বাংলা নববর্ষ এখনও অখণ্ড বাংলার সমৃদ্ধ অতীত, বর্তমান অস্থিরতার সংস্কারক ও ধ্রুপদী বাংলা ভাষার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। দেশ বাংলা নববর্ষের সেই গুরুত্ব নিয়মিত স্বীকার করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ, দুই বাংলা বর্তমানে ভীষণ ভাবে টালমাটাল। দুই বাংলার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ভয়ঙ্কর ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অতীতের অস্বীকার ও বর্তমানের অবহেলার উপযুক্ত প্রতিফলন হওয়া দরকার এই সময়ের গল্প-সাহিত্যে। এই সময়ে তাই আশা ছিল, সাহিত্যিক তথা গল্পকাররা এমন গল্প লিখবেন যা আমাদের সতর্ক এবং সাবধান করে দেবে। এমন গল্প লেখার জন্য চাই সাহস, দূরদর্শিতা ও স্পষ্ট বক্তব্য। বেদনার কথা, এই পরিচয়ের অভাব হয়তো রয়ে গেছে। হয়তো কেউ বলতে চেয়েছেন অন্য ভাবে। সে আশার হদিশ স্পষ্ট হয়নি।

কিছু গল্প অতীতের, যার সঙ্গে আলাপ হয়েছে বর্তমান পাঠকের। স্মৃতির অতীতচারণায় বর্তমান প্রাণ পেলেও তা স্থায়ী হয়নি, বর্তমানেই আটকে গেছে। ব্যতিক্রম দু'টি গল্প। ভবিষ্যতের দিকে যেতে চেয়েছে এআই বিষয়ে গল্প ‘সুপর্ণা এবং সুপর্ণা' (প্রচেত গুপ্ত)। নারী সত্তা ও স্বক্ষমতা বিষয়ে ‘ফুলের তোড়া' (তিলোত্তমা মজুমদার) ঘরের রাজনীতির ‘ঘর বদলের' চমকে দেওয়া গল্প।