চৌরঙ্গী হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ

গান্ধীজির তীব্র বিরোধীতায় মাত্র ৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও একেবারে তাড়াতাড়ি ভাগ হয়ে গেল কংগ্রেস মঞ্চ।

- গোপাল চক্রবর্তী

১৯২৪ সালের ১২ জানুয়ারি। কলকাতাবাসীর ঘুম তখনও ভাঙেনি। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে শ্রীরামপুরের বীর সন্তান গোপীনাথ সাহা বেরিয়েছেন একা। হঠাৎ দেখতে পেলেন নিষ্ঠুর অত্যাচারী পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্ট বুক ফুলিয়ে হেঁটে আসছেন তাঁর কিড স্ট্রিটের বাসস্থান থেকে ময়দানের দিকে। কয়েক সেকেন্ডের প্রতীক্ষা। তারপরেই গোপীনাথের হাতে পিস্তলে আগুনের ঝলক। গুলি গিয়ে বিঁধল শ্বেতাঙ্গ রাজপুরুষের বুকে।

ন কুখ্যাত পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যা করার দায়িত্ব পালনের আনন্দ গোপীনাথের মুখে ছড়িয়ে পড়লেও গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তিনি জানলেন, কুয়াশার মধ্যে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলেও মানুষ চিনতে তাঁর ভুল হয়েছিল। তাঁর পিস্তলের গুলিতে চার্লস টেগার্টের বদলে কিলবার্ন কোম্পানির এক কর্মকর্তা আর্নেস্ট ডে মারা গিয়েছিলেন। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ড ‘চৌরঙ্গী হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক অজিত সেন তাঁর ‘বিপ্লবতীর্থ বরানগর’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘বস্তুত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অনুপুঙ্খ কোনও দিনই লেখা হয়নি। হয়তো হওয়া সম্ভবও নয়।' ঠিক একইভাবে এই আক্ষেপ করেছেন গৌরকিশোর ঘোষ—‘বাঙালি তাঁর ইতিহাস সহজেই বিস্মৃত হয়।

সত্যিই তাই, আত্মবিস্মৃত বাঙালি ভুলতে বসেছে তাঁদের যাঁরা জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে ভাবনাহীন চিত্তে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তারপর প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছেন। কেউ নিজেরা আত্মহনন বা ব্রিটিশ পুলিসের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে চিরদিন, দেশের জন্য স্বার্থহীন ভালোবাসা, ত্যাগ স্বীকার কুণ্ঠাহীন হয়ে কিছু তরুণ জন্মেছেন বারেবারে। যাঁরা প্রাণপণে বিদেশি জঞ্জাল সরিয়ে পৃথিবীকে পরবর্তী প্রজন্মের বাসযোগ্য করে যাওয়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। যাঁরা স্বামী বিবেকানন্দের ‘জন্ম হতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত’ বাণীর উৎসাহে অনুপ্রাণিত। গোপীনাথ সাহার নামও এমন তালিকার মধ্যে পড়ে।