বারান্দা

নিচু হয়ে ফুলদুটি তোলে মানস। মায়ের পোঁতা গাছ। ফুল গালে বোলায়। মায়ের স্পর্শ যেন মানস সিঁড়ি ভেঙে ওঠে। নিঃশব্দ বারান্দাটা কোল পেতে রয়েছে তারই অপেক্ষায়।

- শুচিস্মিতা দেব

মা নিস বারান্দাটার কাছাকাছি এসেই হাঁটার গতি বাড়াল। এমনটা পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দাই করে থাকে। মানস আড়চোখে দেখে নিয়েছে একতলার বারান্দায় চেয়ারে বসা সমরেশকে। সকাল-সন্ধ্যা এই চেয়ারটায় বসেই কাটান সমরেশ, দুটো বাড়ি পরে থাকার সুবাদে যিনি মানসের পাড়াতুতো কাকাবাবু। পঁচাশি বছরের সমরেশের স্বাস্থ্য ভালো। পুলিসে কাজ করতেন। সুঠাম, দীর্ঘ শরীর। চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার শুধু স্মৃতি তাঁর সঙ্গে অধুনা লুকোচুরি খেলছে। বউ-মরা মানুষটি দীর্ঘদিন একা। ছেলে থাকে সুইডেনে। বেয়াড়া ঠান্ডার দেশটিতে সমরেশ এখন যাওয়া ছেড়েছেন। ছেলেই আসে যায়। সমরেশ আজ বছর দুয়েক হল বারান্দায় বসে একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন রাস্তার দিকে। রাস্তা দিয়ে চেনাশোনা কেউ গেলেই হল, শুরু হয়ে যায় ডাকাডাকি। প্রথম প্রথম সাড়া পেতেন। অনেকেই থামত, খেজুরে ভদ্রতায় কুশল প্রশ্ন করত। যেমন মানসও কাকাবাবুর আহ্বানে প্রথম প্রথম থামত। এমনকী বারান্দায় উঠে বসে গল্পটল্পও করেছে কিন্তু সমরেশ প্রতিবারই ভাঙা রেকর্ডের মতো একই প্রসঙ্গে কথা বলে যান। ব্যাপারটা একটু বিরক্তিকর। প্রথমবারের কথাবার্তার নমুনা ছিল এইরকম। -“কেমন আছ বাবা? নামটা কী যেন?” – 'মানস'। – 'হ্যাঁ... মানস। মনে পড়েছে। আজকাল বড্ড ভুলে যাই। তা বাবা-মা কেমন আছেন? অনেকদিন ওঁদের দেখি না। – “বাবা-মা তো নেই কাকাবাবু। বাবা গেছেন তেরোতে, মা উনিশে'।

পরবর্তী সময়ে এই একই প্রশ্নে মারা যাওয়ার কথা চেপে গেছে। কী লাভ শুধু-শুধু মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে? সমরেশ তো ভুলেই যাবেন। যদিও লক্ষ করে দেখেছে নাম-ধাম, সাম্প্রতিক ঘটনা ভুললেও পুরনোদিনের কথা তাঁর মনে থাকে। —চলে গেছেন? আহা! বড্ড ভাব ছিল আমাদের। তোমার বাবা আর আমি একই বছরে ভিতপুজো করি। একই সঙ্গে বাড়ি হল। খোকন তখন স্কুলে। তুমি তখন কলেজ স্টুডেন্ট। – “না কাকাবাবু, তখন আমি চাকরিতে জয়েন করে গেছি। খোকনরা ভালো আছে?' ‘খোকন-বউমা ভালোই আছে। নাতনি এঞ্জেলা তো এখন লেডি ... বুঝলে... ইয়ে.....

–‘মানস’