পিশভি

শুধু পৃথিবীর গভীর পিশভির মতো এই উশ খেতের বারো নম্বর দাগে শতাব্দর পর শতাব্দ গোপনে পড়ে থাকবে যশোমতীর আজ সকালের কান্নাটুকুর ছায়া, যা শুষে নিয়ে হয়তো মিষ্টি, আরও মিষ্টি হয়ে উঠবে আখ গাছেরা। অঙ্কন: মহেশ্বর মণ্ডল না

- অমিত সরকার

কোমরটায় আজ বহুত দরদ। প্রায়ই করে তার। কোমরের টনটনানি উপেক্ষা করেই যশোমতী আবার হাতের ‘কোয়েটা’-টা তুলে ধরে, তার পর শরীরটা ঝুঁকিয়ে সামনের আখ গাছটার গোড়ায় সজোরে একটা কোপ মারে। নেশাগ্রস্ত মরদের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্ৰমাণ সাইজের কালো আখ গাছটা। সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে পড়ে গেছে তার কোয়েটাও। গায়ের ওপর ঝুঁকে পড়া আখের পাতাগুলো যেন তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছে, ছাড়ার ইচ্ছে একদম নেই। ঠিক তার ছোটবেলার প্রেমিক ভীমরাও-এর মতো। সেও ঠিক এমনটাই বদ ছিল। একটু ফাঁক পেলেই তাকে আর ছাড়ত না। কথাটা মনে হতেই ঠোঁটের আড়ালে এক চিলতে হাসি খেলে গেল যশোমতীর। গাছটার সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়তে এই মুহূর্তে তারও খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু উপায় নেই। এই যে নোবেল না কী একটা নতুন জাতের আখ, এখন লাগাচ্ছে সবাই, এর গোড়াটা একটু বেশিই শক্ত। এক কোপে সব সময় কাটে না। দু’কোপও লাগাতে হয় মাঝে মাঝে। এই কাজে কোয়েটা বা আখ কাটার এই বাঁকানো কাস্তেটাই হচ্ছে তাদের জীবন। তাদের প্রেমিক থেকে ভাই, বন্ধু সব কিছু।

এমনকি, এখানে তাদের মজুরির হিসেবও করা হয় কোয়েটার হিসেবে। খানিক বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তাই তার এখন কোনও উপায় নেই। অস্ত্রটা কুড়িয়ে নিয়ে, পা দিয়ে পাতাগুলো ছাড়াতে ছাড়াতে সে পরের গাছটার দিকে এগিয়ে চলে কোয়েটা বাগিয়ে।