গন্তব্য

ধর্মাবতার আমার এই পতনের কারণ কী?” নিরুপমা ফিরে তাকায়, “কারণ, তুমি তোমার গন্তব্যে পৌঁছে গেছ।” সাদা পাহাড় আর নীল আকাশে নিরুপমার কথা প্রতিধ্বনিত হয়, হতেই থাকে। অঙ্কন: তারকনাথ মুখোপাধ্যায়

- ইমন চৌধুরী

জ ঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে একটা কাদামাটি মাখা ঘোলা জলের ঝর্না, এ কোনও স্থায়ী ঝর্না নয়, প্রতি বর্ষায় পাহাড়ে এমন এলোমেলো অল্পায়ু ঝর্নারা জন্মায় এবং মারা যায়, পাহাড়ের গায়ে ওরা কোনও চিরস্থায়ী দাগ রেখে যায় না। ঝর্নার অপর পারে লাল উইনচিটার আর কালো ট্র্যাকসুট পরে যে-লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার নাম ডোলেরাম, পায়ের জুতো দিয়ে ডোলেরাম এখন ঝর্নার মধ্যে কাত হয়ে পড়ে থাকা একটা চ্যাপটা পাথরকে সোজা করছে। দিব্যেন্দু আর নিরুপমা ওই চ্যাপটা পাথরটায় পা দিয়েই অতিক্রম করবে এই ঝর্না। এপারে এসে মিনিট দশেকের বিরতি। “জলের বোতলটা দাও তো...”, নিরুপমা বাড়িয়ে দেয় জলের বোতল, ঢঢক্ করে অনেকটা জল খেয়ে বড় করে কয়েকবার শ্বাস নেয় দিব্যেন্দু, “পাহাড় খুব নেশার জিনিস নিরুপমা! এত যে কষ্ট হয়, তবু না এসে তো পারি না!” , নিরুপমা চোখ বন্ধ করে বসেছিল, ওর ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা যায়, “জীবনে যদি কোনও নেশাই না-থাকবে তবে আর বেঁচে থেকে কী লাভ বলো?”

ডোলেরাম এতক্ষণ সেই ঘোলা জলের স্রোতটার দিকে একদৃষ্টে চেয়েছিল, এখন সে ওদের দিকে ফিরে হিন্দিতে বলে, সামনে দেড় কিলোমিটার খাড়া পাহাড়। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, বৃষ্টি নামলে এই পথে হাঁটা আরও অনেক কঠিন হয়ে যাবে, অতএব আর বসে থাকার মতো অবসর নেই। একটুক্ষণ বসেই শরীরটা বেশ চনমনে লাগছে দিব্যেন্দুর, গা ঝাড়া দিয়ে সে-ই প্রথমে উঠে দাঁড়ায়। ডোলেরাম দিব্যেন্দুর সামনে এসে দাঁড়ায়, “সব ঠিক?” দিব্যেন্দু মাথা নাড়ায়, একদম ঠিক, পারফেক্ট। ঝর্নাটা ডানপাশে রেখে একটা পাথুরে রাস্তা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে উপড়ে উঠে গেছে। সেই পথ ধরেই ওরা চলতে থাকে।