শিল্পডাঙার গীতা

তাঁর আন্তরিক নৈপুণ্যে গড়ে তোলা ধাতব গণেশমূর্তি বাজায় খোল! প্যাঁচার দল চেয়ে থাকে আদুরে চোখে! বাঁকুড়ার মাটিতে বসে তিনি ছিনিয়ে নেন জাতীয় সম্মানের খেতাব। ক্লান্তিহীন এভাবেই দশহাতে সংসার-শিল্প সামলান গীতা কর্মকার। লিখেছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

বছর ২৫ আগেও ৫০ পেরলেই অবসরের জন্য দিনগোনা শুরু হতো। আনুষ্ঠানিক বয়স্ক নাগরিকের বয়সে পৌঁছে অনেকেরই জীবন সম্পর্কে নিরাসক্তি কাজ করত। কিন্তু ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে সেসব চিন্তাকে অগ্রাধিকার দেন না অধিকাংশ নাগরিক। ৬০ তো এখন নব্য ৪০। বাঁকুড়ার শিল্পডাঙার গীতা কর্মকারের জীবনটা খানিক আলাদাই বটে। বয়স ৫৩। কালের হিসেবে তা হয়তো খুব বেশি নয়। তবে চাষি পরিবারের মেয়েটি জীবনভর সংগ্রাম করেছেন। একার হাতে গড়েছেন সংসার। নানা রকম জীবন দেখেছেন। শরীর ভেঙেছে অনেকটাই। তবে মন আজও তরুণীর। গীতা ডোকরা শিল্পী। ডোকরার কারুকাজ আক্ষরিক অর্থেই তাঁর বেঁচে থাকার রসদ।

চোখে চশমা। আটপৌরে করে পরা সাধারণ শাড়ি। দু’হাত অনবরত ব্যস্ত। একদিকে সংসারের রান্না। আর একদিকে ডোকরার মূর্তি গড়া গীতার নিত্যদিনের কাজ৷ নিতান্ত সাধারণ ভাবে জীবন বয়ে পুতুল তৈরির কর্মশালায় আলাপ হল তাপস কর্মকারের সঙ্গে। তিনি গীতাদেবীর ছোট ছেলে। পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তাপস। সঙ্গী তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে। তাপসের কাছেই তাঁর মায়ের কথা প্রথম জানতে পারলাম। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, গীতাদেবীর হাতের কাজ দেশবিদেশে প্রশংসিত। শুধু তাই নয়, তাপস বললেন, 'মা ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিল।' মায়ের গর্বে ছেলের চোখও উজ্জ্বল।