কেরল কাহিনি

পুরাণ ও প্রকৃতির এক অনন্য সহাবস্থানের অভিজ্ঞতা! কোভালাম থেকে জটায়ুমণ্ডলম ঘুরে এসে কলম ধরলেন মানস মুখোপাধ্যায়।

কন্যাকুমারী থেকে কেরলের আজিমালা ) শিবমন্দির ঘুরে, কোভালাম সি-বিচে এসেছি। ভিঝিনজাম গ্রামে সমুদ্র লাগোয়া পাহাড়ি পটভূমিকায় রয়েছে এক সুপ্রাচীন শিবমন্দির। যা আজিমালা শিবমন্দির নামে পরিচিত। তবে হাল আমলে এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫৮ ফুট উঁচু একটি সুবিশাল শিবমূর্তি। যা কেরলের সর্বোচ্চ শিবমূর্তি বলে দাবি করা হচ্ছে। কংক্রিটের এই মূর্তিটি প্রকৃত পক্ষে গঙ্গাধরেশ্বর শিবের। দেবাদিদেব মহেশ্বর গঙ্গা দেবীকে জটাতে ধরে রেখেছেন। রুদ্রদেবের জটাজাল বাতাসে উড়ছে। এক কথায় অনবদ্য ভাস্কর্য! ঘেরা জায়গায় মধ্যে অবস্থিত এই মূর্তিটি কাছ থেকে দেখতে হলে, মন্দির কর্তৃপক্ষের কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে হবে। ইচ্ছে করলে মন্দির চৌহদ্দির বাইরে থেকেও দর্শন মেলে এই মূর্তির। পিছনেই পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ছে অশান্ত সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। মন্দির আর মূর্তি ছাড়া, নারকেল গাছের ফাঁকে দুরন্ত সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতেই সময় কোথা দিয়ে চলে যায়! অভিনব এই মূর্তিকে অন্তর দিয়ে অনুধাবন করে গাড়িতে উঠলাম। দুপুরে পৌঁছলাম বিশ্ব খ্যাত কোভালাম সৈকতে। হোটেলের ব্যালকনি থেকে সমুদ্র দেখেই আনন্দে আত্মহারা! মালপত্র রেখেই এক ছুটে সি-বিচে। এটা অন্য অনেক সৈকতের চেয়ে একদম আলাদা। বলা চলে, রোমান্টিক সৈকত! নারকেল গাছে ছাওয়া অর্ধচন্দ্রাকৃতি সোনালি বালুতটে জেলে নৌকার সারি। সৈকত জুড়ে নানা হোটেল আর রিসর্ট। সারি সারি ডেক চেয়ার আর মাথার উপর রঙিন ছাতা। মাঝে মাঝে সিফুডের রেস্তরাঁ। দেশি বিদেশি পর্যটকদের সমুদ্র স্নানের হুটোপুটি। আছড়ে পড়া জল ফেনার মধ্যে পা ভিজিয়ে সৈকতে পদচারণ। ডেঞ্জার জ়োনে নিরাপত্তা রক্ষীদের সতর্ক বাঁশি। রয়েছে জল ক্রীড়ারও নানা ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে লা-জবাব! একটু পরেই সাগর জলে লাল আবির ছড়িয়ে সূর্যদেব অস্ত গেলেন। বর্ণনাতীত সেই সৌন্দর্য... সত্যি মন ছুঁয়ে গেল!

সূর্যাস্ত দেখলাম ঠিকই, তবে সময়াভাবে লাইটহাউসে উঠতে পারলাম না। পথ চলতি এক রেস্তরাঁয় কফি আর মাছ ভাজা নিয়ে বসে পড়লাম। বিচে আছড়ে পড়ছে আরব সাগর। সেই চির পুরাতন, চির নতুন ঢেউ ভাঙার খেলা! অনাবিল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি... নারকেল পাতায় পাতায় অন্ধকার নেমে আসে। অনেক রাত পর্যন্ত সি-বিচের ওম নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। রুমে বসেও মনটা পড়ে রইল বালু তটেই। রাতে বৃষ্টি হল ভালই। মনে হল কাল আর সূর্যের মুখ দেখা যাবে না!