একুশ দিনের সংসার

ঝগড়াঝাঁটি এক সময় এমন তুমুল হয়ে দাঁড়াল যে, ঋতু চটপট উবের ডেকে ওঁদের নিয়ে চলে এল দ্বারকার ভাড়া বাড়িতে। সুমন ফিরল শ্বশুর-শাশুড়ি কলকাতায় ফেরার আগের দিন। কিন্তু ওদের সম্পর্কে যে ফাটল ধরে গিয়েছে, সেটা বুঝতে সরোজ আর অনুভার কোনও অসুবিধা হল না ।

- ন লি না ক্ষু ভট্টাচাৰ

ঋতুর সঙ্গে সুমনের ছাড়াছাড়িটা যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই একুশ দিনের লকডাউন ঘোষণা করল সরকার। ওদের প্রেম করে বিয়ে হয়নি, একটা ম্যাট্রিমোনিয়াল ওয়েবসাইট দেখে ওদের বাবা-মায়েরাই সম্বন্ধটা ঠিক করে দিয়েছিলেন। ছেলেমেয়ে দু'জনেই ভাল চাকরি করে, সুমন আইটি সেক্টরে বহুজাতিক সংস্থায় আর ঋতু ব্যাঙ্কে; একজনের প্যাকেজ কুড়ি লাখ আর একজনের আঠারো লাখ।

সব মিলিয়ে যে দম্পতি আটত্রিশ লাখ টাকা উপার্জন করে বছরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক পাতাতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। সুমনের বাবা আদিনাথ সেন কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে বিগত শতাব্দীর সাতের দশকে কেরানি হয়ে ঢুকলেও, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে রিটায়ার করেছেন আন্ডার সেক্রেটারি হয়ে, অর্থাৎ গেজেটেড ব‍্যাঙ্কে। নয়ডার শান্তিবিহারে যে পঁচিশ ঘর বাঙালির আস্তানা, তাঁদের বিশেষত, তাঁদের স্ত্রীদের, কারও জানতে বাকি নেই যে, মৃদুলার কর্তা ওঁর মন্ত্রালয়ের প্রশাসন বিভাগের বড় অফিসার ছিলেন। ওঁদের হিরের টুকরো ছেলে সুমন অফিস থেকে পাঠানো বড় গাড়িতে চড়ে গুরুগ্রামের অফিসে যাবে আর বছরে বার দু'-তিনেক অফিসের কাজে ইউরোপ-আমেরিকা পাড়ি দেবে। এতে আর আশ্চর্যের কী আছে?