সাইকোথেরাপি

জীবনকে নতুন করে চিনতে শেখায় সাইকোথেরাপি। কারা নিতে পারেন এই থেরাপির সাহায্য? লিখেছেন ডঃ উৎপল অধিকারী।

সা -ইকোথেরাপি শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ‘সাইকি’ অর্থাৎ শ্বাস নেওয়া এবং থেরাপিয়া অর্থাৎ হিলিং বা মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট- শব্দ দু’টি থেকে এসেছে। সাইকোথেরাপি একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মানসিক এবং ব্যক্তিত্বের সমস্যাকে দূর করা হয়। এই থেরাপিতে রোগীকে কোনও মনোরোগ চিকিৎসকের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁর সমস্যা অত্যন্ত যত্ন সহকারে শোনা হয় এবং তা দূরীকরণের যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে সমস্ত কথাবার্তা, রোগের ধরন এবং অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। এছাড়াও রোগী বা রোগিণীর সম্ভ্রম সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করা হয়।

সাইকোথেরাপিতে রোগীর কাউন্সিলিং করা, রোগের ধরন বা প্রকৃতি নির্বাচন করা ও সময় নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। সুদীর্ঘ সময় ধরে ভারতের মতো দেশগুলিতে মানসিক সমস্যা দূরীকরণে ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে আধ্যাত্মিকতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আজও সমগ্র বিশ্বে মানসিক শান্তিকামী মানুষ ভারতীয় এবং তিব্বতীয় আধ্যাত্মিকতার ওপর নির্ভর করেন। তবে উনিশ শতক থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দেশগুলিতে সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মানসিক চিকিৎসা করা হচ্ছে। সাইকোথেরাপি অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত, আধুনিক এবং যুক্তিযুক্ত। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতো বিখ্যাত মনোবিদরা সাইকোথেরাপি নিয়ে কাজ করেছেন। এই থেরাপিতে রোগীর মেজাজ, তাঁর অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং আচরণ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা করা যায়। বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি, যথা উদ্বেগজনিত ব্যাধি, মুড ডিজঅর্ডার, ইটিং ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়া চিকিৎসায় এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। বিভিন্ন উদ্বেগজনিত ব্যাধি অর্থাৎ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি), ফোবিয়া, প্যানিক ডিজঅর্ডার বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস অর্ডার ইত্যাদি উপশম করতে এই থেরাপির জুড়ি মেলা ভার। মুড ডিজঅর্ডার যেমন বিষণ্নতা বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার, বিভিন্ন নেশার দ্রব্যে আসক্তি যেমন, মদ্যপান, ধূমপান এবং ড্রাগের নেশা থেকে মুক্তির জন্য রোগীরা সাইকোথেরাপির শরণাপন্ন হন। ইটিং ডিজঅর্ডার যেমন অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়া; ব্যক্তিত্বের সমস্যা। যথা বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার বা নির্ভরশীল ব্যক্তিত্বের ব্যাধি ও মানসিক রোগ যথা, সিজোফ্রেনিয়া দূরীকরণে বর্তমানে ওষুধের পরিবর্তে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে।