একই অঙ্গে এত রূপ...

বিজয়া রায়ের কথা বলতে গেলে এই পংক্তিটিই মাথায় আসে। তিনি ছিলেন যেন এক হীরকখণ্ড, যার দ্যুতিতে উদ্ভাসিত হয়ে ছিল রায় পরিবার, সত্যজিৎ রায়ের শুটিং ইউনিট এবং তাঁর আশপাশের প্রতিটি মানুষের জীবন। মা-কে নিয়ে স্মৃতির পাতা ওল্টালেন সন্দীপ রায়।

- সন্দীপ রায়।

একজন মানুষ যে এত গুণের অধিকারী হতে পারেন, মা-কে কাছ থেকে না চিনলে কি কখনও টের পেতাম? মনে তো হয় না! কী পারতেন না মা? অসাধারণ গাইতেন, সেলাই-বোনায় দক্ষ ছিলেন, দুর্ধর্ষ রন্ধনশিল্পী, তেমনই ভাল নার্সিং করতেন... আবার এই সবের পাশাপাশি দশ হাতে সংসার চালাতেন, আমার পড়াশোনার দিকে নজর রাখতেন, আত্মীয়-বন্ধু-পরিচিত সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, কারও শরীর খারাপ হলে অক্লান্ত সেবা করতেন। আর বাবার কাজের পিছনে মায়ের অবদানের কথা লিখতে গেলে আলাদা একটা বইই হয়ে যাবে! চেষ্টা করছি স্মৃতিতে ডুব দিয়ে যতটা পারি, মায়ের কথা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার।

মা না থাকলে বাবার ‘সত্যজিৎ রায়’ হওয়া হত না এটা শুধু আমার মুখের কথা নয়, খুব দৃঢ় ভাবে এটা আমি বিশ্বাস করি। 'পথের পাঁচালী' তৈরি হওয়ার পথটা যে খুব সুগম ছিল, তা তো নয়! টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর্থিক সাহায্য আসছে না, ছবি আদৌ শেষ হবে কি না তা-ই কেউ জানে না— সেই সময় মা বরাবর বাবাকে মনের জোর তো জুগিয়েছেনই, টাকার জন্য এমনকি নিজের গয়নাও বন্ধক দিয়েছেন। ‘অপু'র চরিত্রে সুবীরদাকেও (বন্দ্যোপাধ্যায়) তো মা-ই খুঁজে পেয়েছিলেন, জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে! অত ভাল চাকরি ছেড়ে বাবা যখন ছবি করতে এলেন, তখন মায়ের যে একটু চিন্তা হয়নি তা নয়... তবে অফিস থেকে বাবা যখন বিলেত যান এবং মা-ও সঙ্গে যান, তখন লন্ডনে 'বাইসিল থিস' দেখার পর বাবা এবং মা দু'জনেই মনে জোর পান যে, এ ভাবেও ছবি করা যায়। এবং ঠিক করে ফেলেন যে ছবি করা উচিত। মুক্তির পরে প্রথম দিকে ছবিটা যখন তেমন ভাল চলছিল না, তখন অবশ্য সকলেই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তা হলে কি ভুল হয়ে গেল? তার পর অবশ্য আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি!