সামনের অমাবস্যায়

একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘শরীর খারাপ নাকি?' সুশান্ত বলল, ‘না, গা-টা একটু শিরশির করছে! ও কিছু না।'

শত প্রায় এগারোটা। বাতাসে একটু একটু শীতের | আমেজ। আকাশে হালকা মেঘ, বৃষ্টি হতে পারে হয়তো। মাঝে মাঝে শনশন করে হাওয়া বইছে। কৃষ্ণপক্ষের ঘন অন্ধকার রাত। সন্ধে সাতটা নাগাদ পাঁচ-ছ'জন বন্ধু রোজ যেমন আসে, আজও এসেছিল। বাইরের ঘরে বসে খানিকক্ষণ আড্ডার পরে রাত ন'টা নাগাদ তারা চলে গিয়েছে। সবাই একই গ্রামের। একজন শুধু পাশের গ্রামের। কেউ স্কুলমাস্টার, কেউ কাছেপিঠে অফিসে চাকরি করে, কারও বা বাজারে দোকান আছে। যার বাড়িতে আড্ডা, সেই সুশান্তই কোনও চাকরিবাকরি করে না। বাপ-ঠাকুরদার আমলের বাগানসহ বেশ বড় দোতলা বাড়ি, পুকুর, মাঠে অনেকটা ধানজমি এবং একটি লরি আছে। বেশ সম্পন্ন গেরস্তই বলা যায়। সুশান্ত সবে প্রৌঢ়ত্বে পা রেখেছে। চেহারাটি খুব সুন্দর। চট করে অমন সুপুরুষ চোখে পড়ে না। বাড়িটা পুরনো হলেও বেশ বড়। আগেকার দিনের নকশা। কড়ি-বরগার ছাদ, জানালার দৈর্ঘ্য দরজার সমান। তার লোহার শিকগুলো জং ধরে জীর্ণ হয়েছে, কোনও-কোনওটা নীচের কাঠ পচে নড়বড়ে, একটু টানলেই খুলে আসবে ! আজ আড্ডায় ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রসঙ্গ উঠেছিল। বন্ধুদের সবাই যে ভূতে বিশ্বাস করে, এমন নয়। দু’জন আছে, যারা ভূতে ঘোরতর বিশ্বাসী। একজন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি। দু'জন ভূতের ব্যাপারটাকেই ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়! সুশান্ত শেষ দলের। তার মতে, ওসব গাঁজাখুরি কল্পনাবিলাস ছাড়া কিচ্ছু নয়! নয়তো ওঝা-গুনিনদের বুজরুকি ! তখন রাত গভীর। সন্ধের ওই ভূতের কথা মনে পড়ে