কোন লেবুর কী গুণ?

লিখেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুর্বেদ গবেষণা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডাঃ সুবল কুমার মাইতি

- ডাঃ সুবল কুমার মাইতি

ক থাটা লেবু না নেবু! সংস্কৃত শব্দ নিম্বু বা নিম্বুক থেকে বাংলায় হল ‘নেবু’। নেবু শব্দটা বোধ হয় কারও কারও কাছে গেঁয়ো হয়ে গিয়েছিল, ফলে একদা সেটি গালভরা শব্দ ‘লেবুতে’ পরিণত হল। আবার পাশ্চাত্যের ধারণায়, ছোট লেবুগুলো ‘লাইম' আর বড়গুলো ‘লেমন'। তারপর গণ্ডায় গণ্ডায় সংকর প্রজাতির সৃষ্টি, বিশ্বব্যাপী লেবুর সাম্রাজ্য গড়ে উঠল। একদা বুনো বা জংলি প্রজাতির তেতো, টক, মিঠা লেবুর হাইব্রিডেশনের ফলে লেবুর বহু প্রজাতির যেমন সৃষ্টি হল, তেমনই সঠিক পরিচিতির ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা দেখা দিল।

একই লেবু স্থান, আবহাওয়া ভেদে বর্ণগন্ধ-আকার স্বাদে তারতম্য হওয়ায় আর কোন একের পর এক সংকর প্রজাতির সৃষ্টিতে জটিলতা ক্রমেই বেড়েছে। একই লেবু নানাভাবে আলোচিত হয়েছে।

প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে লেবুকে নিয়ে বিশেষ কোনও আলোচনা দেখা না গেলেও চরক সংহিতা ও সুশ্রুত সংহিতায় উল্লেখিত মাতুলুঙ্গ, জম্বীর, নারঙ্গ, জামির লেবু প্রভৃতি পরবর্তীকালের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রাদিতে নানাভাবে আলোচিত হলেও বর্তমানে প্রাপ্ত লেবুগুলি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা সম্ভব নয়।

কারণ রাজনিঘণ্ট, মদনপাল নিঘন্টু, ভাবপ্রকাশ নিঘন্টু প্রভৃতি গ্রন্থে উল্লেখিত নিম্বুফলং, নিম্বুক, নিম্বু, রাজনিম্বু প্রভৃতি নামের আড়ালে পাতিলেবু বা কাগজি লেবুকে নিয়ে আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। মদনপাল নিঘন্টুতে আলোচিত নিম্বুকে আমরা পাতিলেবু বা কাগজি লেবু বলতে পারি, আবার রাজনিম্বুকে জামির বা জম্বীর লেবু বা বড়লেবু বা গোঁড়ালেবু বলতে পারি। মাতুলুঙ্গ লেবু সম্বন্ধে বেদের সমান মান্যতা প্রাপ্ত ‘উপবর্তন সংহিতা'য় কিংবা সুশ্রুত সংহিতায় যেসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, তা পৃথক পৃথকভাবে আলোচিত হবে। এভাবে অন্যান্য লেবু নিয়ে যেসব প্রাচীন তথ্য আমাদের নজরে এসেছে, সেগুলিকে বর্তমান উদ্ভিদ বিজ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাচীন ও নবীন চিন্তাধারার মেলবন্ধন ঘটিয়ে তাদের গুণপনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব লেবু কমবেশি ব্যবহার করি বা খেয়ে থাকি, সেগুলির অধিকাংশই শঙ্কর প্রজাতির এবং নানা নামে পরিচিত। আলোচ্য প্রবন্ধে সেইসব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে একটা সম্যক আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো হচ্ছে। বিশাল তালিকা থেকে কয়েকটি লেবুকে আলোচনার আসরে রাখা হচ্ছে, যেমন-