রিজার্ভ ডিউটি অয়ন চট্টোপাধ্যায়

কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম। মহামূল্যবান কাগজগুলোকে সরিয়ে ফেলেছেন নিরাপদ জায়গায়। তবে অর্ণবের বগলবন্দি ছাগলের চিৎকারে কুঁচকে যাচ্ছে স্বর্ণালী সেনের চোখমুখ।

‘কী *! ভোটের ডিউটি দিতে...?’ দাঁত বের করে | জিজ্ঞেস করল হারুদা। ‘না। হানিমুন করতে!’ দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল অর্ণব। ভোটের আগের দিন পিঠে গোদা ব্যাগ নিয়ে সরকারি কর্মচারী কোথায় যেতে পারে সব জেনেশুনেও যত্তসব উজবুকের মতো প্রশ্ন! স্টেশনে ঢোকার মুখেই হারুদার গুমটি দোকান। অফিস যাওয়ার পথে হাতে সময় থাকলে এখান থেকে পান কেনে অর্ণব। পান মুখে ডাউন বারাসাত লোকালে চল্লিশটা মিনিট বেশ লাগে। কিন্তু আজ আর তার পানাসক্তি জাগছে না। গন্তব্যটাও আজ উল্টো দিকে। বনগাঁ। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঢুকে গেল ভিড়ে ঠাসা আটটা পঞ্চান্নর আপ বনগাঁ লোকাল। বারাসাত জেলা শহর। প্রচুর ভোটকর্মী নামল এখানে। তবে উঠল আরও বেশি। উল্টোদিকের দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ল অর্ণব। হঠাৎই পিঠে হালকা টোকা। ঘাড় ঘোরাতেই, ‘আরে কোথায় পড়ল?’

দেঁতোহাসি নিয়ে অর্ণবের উত্তরের অপেক্ষায় যে দাঁড়িয়ে আছে, অর্ণবের কাছে তার একটাই পরিচয়। ‘বিশ্বাস’। ডাউন বারাসাত লোকালে অর্ণবের কামরাতেই ওঠে। হৃদয়পুর থেকে। লোকটার সঙ্গে অনেকবার চোখাচুখি হলেও কথাবার্তা কোনওদিনই হয়নি। বিশ্বাসের চাহনি আর চলনে-বলনে কেমন যেন একটা ধূর্ততার আভাস পেয়েছে সে। একটা সবজান্তা ওপরচালাকির ভাব। তবে ভোটযুদ্ধে যাওয়ার পথে সামান্য চেনা লোকটার সান্নিধ্য পেয়ে মন্দ লাগছে না অর্ণবের। ‘বনগাঁ কলেজে ডি.সি পড়েছে। আপনার?’ ‘হা হা, আমারও ওই কলেজেই ডি.সি। রিজার্ভ প্রিসাইডিং। হা হা হা...!' ‘আমারও রিজার্ভ ডিউটি। প্রিসাইডিং।’ নিচু গলায় বলল অর্ণব।

ওদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল বছর বারো-তেরোর মোটাসোটা একটা ছেলে। সঙ্গে মা। ভিড় ট্রেনে ল্যাজেগোবরে অবস্থা। গোবরডাঙায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারই মধ্যে ছেলেটা আপনমনে দুবার ‘ডি.সি, ডি.সি...’ বলে উঠল। ‘এই ডি.সি কিন্তু ডাইরেক্ট কারেন্ট নয় ভাইপো।' মাখনের মতো গলায় বলল বিশ্বাস।

‘এর নাম ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার। এখান থেকেই ভোটের সমস্ত মালপত্র দেওয়া হয়। আবার ভোটের পর পুরো গন্ধমাদন তুলে এনে এখানেই জমা করতে হয়। তখন জায়গাটার নাম হয়ে যায় আর.সি। রিসিভিং সেন্টার। হে হে, কেমন মজা!'