খিদে

ক’মুঠো চাল দেবেন? চার, পাঁচ না ছয়? হাঁড়ির জল ফুটে উঠলে তাতে চাল ঢেলে দিলেন বামাই ঠাকুর।

- দেবাশিস রায়

বা মাই ঠাকুর মধ্যাহ্নভোজের তোড়জোড় করছিলেন। খাবার বলতে দু'মুঠো চালের সঙ্গে আলু, করলা, ঝিঙে যেদিন যা জোটে তা সেদ্ধ করে নেন। কাঠের উনুনে মাটির হাঁড়ি চাপিয়ে জল গরম হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর এই আশ্রমিক সর্বত্যাগী জীবনে এটুকুই পার্থিব পিছুটান। নানা চিন্তা এসে ভিড় করে এ সময়। এই অরণ্যের মধ্যে আশ্রম জীবনেও নানা প্রতিকূলতা এসে ধরা দেয় মাঝে মধ্যেই। বামাই ঠাকুর সেসব নিয়ে একটু চিন্তাক্লিষ্ট কদিন ধরে। জঙ্গলের মধ্যে একটা পাগল গোছের লোক কদিন ধরেই ঘোরাফেরা করছে। লোকটা বামাই ঠাকুরকে দেখলেই জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভয় পায় কি না, কে জানে! কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো মানুষ তো নন তিনি। বরং জঙ্গলের আশপাশের দশ গাঁয়ের মানুষ তাঁর কাছে আসেন মনের শান্তির খোঁজে। শ্রদ্ধা করেন তাঁরা। যে কোনও মানুষের বিপদে আপদে সব রকম প্রয়োজনে তাঁরা বামাই ঠাকুরকে পাশে পেয়েছেন। এই বামাই ঠাকুর নামটাও ভালোবেসে ওঁদেরই দেওয়া। সব কাজ বাম হাতে করেন বলে। কিন্তু এই লোকটি কিছুতেই বামাই ঠাকুরের কাছে আসতে চায় না। দেখলেই পালিয়ে যায়। চেহারা দেখলে বোঝা যায়, সে ঠিকমতো খায়নি বহুদিন। অসুস্থও বোধহয়। কাছে এলে, ঠাকুর তাকে আশ্রমে রেখে দেখাশোনা করতে পারতেন। সেদ্ধ ভাত দুটো ফুটিয়ে নিয়ে দু'জন একসঙ্গে খেতে পারতেন। কিন্তু কাছে এলে তো!

লোকটিকে নিয়ে আরেকটি বিষয়ে বামাই ঠাকুর চিন্তিত। যদি সে অপরাধী হয়? হয়তো পুলিসের চোখকে ধুলো দিতে এই জঙ্গলে এসে আত্মগোপন করে আছে। আতঙ্কবাদী গোছের যদি কেউ হয়? এই জঙ্গলের মধ্যে বামাই ঠাকুর ছাড়া অন্য কোনও মানুষের বাস নেই। তেমন কিছু হলে পুলিসি ঝামেলা শুরু হতে পারে। বারবার লোকটি বামাই ঠাকুরকে দেখলেই পালিয়ে যাওয়ায়, সম্প্রতি এই চিন্তাটি বামাই ঠাকুরকে গ্রাস করেছে। নাহলে, মানুষ থেকে সে কেন দূরে থাকতে চায়? আড়াল খোঁজে? কেন, মানুষ দেখলে ভয় পায়, দূরে পালিয়ে যায়? আচমকা একটা কলরব শুনতে পেলেন বামাই ঠাকুর।