ইচ্ছেপূরণ

গ্রামের সোঁদা গন্ধে ফিরে পেলাম হারানো দিনগুলো। শেষবারের মতো নিজের চোখে দেখে এলাম পৈতৃক ভিটে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকাই কি শেষ কথা?

- তন্ময় কাঞ্জিলাল

প্রায় আশি ছুইছুই বয়সের দোরগোড়ায় এসে শিবু শীলের কিছু বাসনা মনে জেগেছে। কিন্তু সেসব কামনা বাসনা এখানে ছেলে-বউমাদের কাছে বলতে সাহস হয় না। বেচারাদের পক্ষে এইসব বিচিত্র ইচ্ছেপূরণ করার ঝক্কিঝামেলা সামলানো সহজ কাজ নয়—এটা শিবু শীল কিন্তু উপলব্ধি করে। শিবুর খুব ইচ্ছে হয় গাঁয়ে গিয়ে শেষবারের মতো পৈতৃক ভিটেটা একবার নিজের চোখে দেখে আসতে। প্রতি বছর বোশেখ মাসে গাঁয়ে চব্বিশপ্রহর কীর্তনের সময়টাতে গাঁয়ের কথা খুব মনে পড়ে, আর মনটা উশখুশ করে ওখানে যেতে। তিন দিন ধরে ডাবু অধিকারীদের রাধামাধব মন্দিরের বিশাল উঠোনে সামিয়ানা টাঙিয়ে অহোরাত্র কীর্তন হতো। আশপাশের গ্রামগুলো ছাড়াও সিয়াশোলের করুণা হাজরা, ভুলুইয়ের নিশীথ ঘটকদের কীর্তনের দল আসত। ছোট্ট মেলা বসত। ঘরে ঘরে কুটুম আসত। এমনকী তখন চব্বিশ প্রহরের দিনগুলোতে গাঁয়ের সব ঘরে আমিষ খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আসলে শিবুদের গ্রামে এটাই ছিল সবথেকে বড় পরব। শিবুর এসব সোঁদামাটির গন্ধ মাখা দিনগুলোর কাহিনি তো ছেলে-বউমারা শুনতেই চায় না। ওরা নিজেদের চাকরি, ছেলেমেয়ে মানুষ করা, আর সংসার নিয়েই তো নাজেহাল। শিবু মাঝে মাঝে কথাচ্ছলে কবীরকে বলে গ্রামে গিয়ে আগের মতো ক'টা দিন কাটিয়ে আসার কথা। এসব শুনে কবীর একদিন বাবাকে বলেই ফেলে, “তোমার এইসব আজগুবি জীবন কাটাবার ইচ্ছেগুলো ভুলে যাও বাবা। সময় পাল্টেছে। এখন তিন-চার দিন ধরে খোল-কত্তাল বাজিয়ে কোনও ছেলেমেয়ের কেত্তন করার সময় নেই। চাকরির চিন্তায় সবাই দেশ-বিদেশে ছুটে বেড়াচ্ছে। চাঁদে মানুষ যাচ্ছে।' শিবু দমে যায়। কষ্টগুলো মনে চেপে রাখে অসহায়ভাবে।