ওরিয়া উৎসবে ওয়াক্কা

শীতের শেষে অরুণাচলের অচিন গ্রাম ওয়াক্কা মেতে ওঠে ওরিয়া উৎসবে। এবারের ওরিয়া উৎসব ১৬ ফেব্রুয়ারি।

আসামের ডিব্রুগড় থেকে সত্তর কিলোমিটার দূরে অরুণাচল প্রদেশের প্রবেশদ্বার, কানুবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সমতলে। গাড়ির চালক লক্ষ্যজিৎ কোঁয়ার ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা। কথায় কথায় আমি নিরামিষাশী জেনে সে বলল, যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সবজি কিন্তু পাবেন না। ওখানকার লোকেরা দু'বেলা জংলি শাক সেদ্ধ, মাংস, আলুর ঝোল-ভাত খায়। রান্নায় তেল দেয় না। দধও খায় না।

যাওয়ার রাস্তায় একটা গ্রামীণ হাট পড়ল। সেখান থেকে প্রচুর টাটকা সবজি কিনে নিয়ে গাড়িতে ভরল লক্ষ্যজিৎ। কানুবাড়ির পর ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ওয়াক্কা গ্রামে পৌঁছলাম সন্ধেয়। নিউ ওয়াক্কায় পি কে হোমস্টেতে থাকার বন্দোবস্ত করে এসেছি। হোমস্টের মালিক সেখাং খাঙ্গাম মধ্যবয়সি ব্যক্তি। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক। পরদিন সকালের আলোয় এলাকার ভূপ্রকৃতি কিছুটা বোঝা গেল। চারদিকে পাহাড়ের সারি। বেশিরভাগই প্রায় ন্যাড়া। পাহাড়ি ঢালে ঝুম চাষের প্রস্তুতি চলছে। মূল রাস্তা থেকে পাহাড়ি উতরাই বেয়ে একটু নামলেই চওড়া সমতলে পি কে হোমস্টের একতলা বাড়িটা। বড় বড় ঘর, বৈঠকখানা, দামি ফার্নিচার, পর্দা। এক প্রান্তে সাবেকি রান্নাঘর। এখনও কাঠে রান্না হয় । তারপরে খাদ।

ONSO ONES A রান্নাঘরে মোড়ায় বসে প্রাতরাশ সারছি, এমন সময় সেখাংজি সেখানে এসে বললেন, “জঙ্গলে যাবেন তো চলুন!' জানা গেল ওঁর পাঁচটা মিথুন আছে। প্রত্যেকের ছানা হয়েছে। এবার ছানাদের কানে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে আসতে যাবেন তিনি, যে-চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে সেখাংজিই তাদের মালিক। মালিক। মিথুনকে অরুণাচলে পবিত্র প্রাণী মনে করা হয়। উৎসবে, পালাপার্বণে মিথুন বলি হয়। তবে মিথুনগুলি জঙ্গলেই ছাড়া থাকে। মালিকানা বোঝা যায় কানের ওই চিহ্ন দেখে! জঙ্গল থেকে ফিরতে সেখাংজির বিকেল হয়ে যাবে শুনে আমি ওঁর সঙ্গী হতে চাইলাম না । কারণ নিউ ওয়াক্কায় রাজদর্শনে যাব বলে ঠিক করে রেখেছি।