সীমানা পেরিয়ে

সীমানা পেরিয়ে" বইটি ঘিরে অর্ক ও রজতের গল্প একদিকে স্মৃতির মধুর পরশ, অন্যদিকে ক্ষতির মর্মব্যথা নিয়ে এক অনন্য রূপ নিয়েছে। বইটি শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, এটি অর্কর শৈশব থেকে কৈশোর, বন্ধুতা, এবং জীবনের গভীর অনুভূতির প্রতীক। বইটি হারানোর বেদনাকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর সম্পর্কের জটিলতা ও স্মৃতিচারণার মধুর দোলাচল সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এটি পাঠককে জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব এবং অতীতের মায়ার গভীরতায় ডুবিয়ে দেয়।

- অর্ণব মণ্ডল

তোকে একটা কথা বলা হয়নি অর্ক...' চেয়ার ছেড়ে ওঠার আগে বলল রজত। বেশ কয়েক মাস পর অর্কদের বাড়িতে এসেছে রজত। একটা বই নিতে আর একটু গল্প করতে। অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি তাদের। দু'জনে একসঙ্গে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিত ওরা। অর্ক চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর এখন আর সেটা হয় না। রজতের প্রস্তুতি এখন জোরকদমে চলছে। সামনেই রেলের পরীক্ষা। 'হ্যাঁ, বল কী বলবি!' বলল অর্ক। ‘অনেকদিন ধরেই বলব বলব করছি, কিন্তু বলতে পারছি না।'

‘আরে অত কী ভাবছিস? বলে ফেল যা বলবি। তুই এমন ভাব করছিস যেন তোর সঙ্গে আমার দু’-দিনের আলাপ!' ‘আসলে কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। বলার মুখও নেই আমার...!' রজতের কথা শুনে একটা আশঙ্কা ঘিরে ধরল অর্ককে। মুখের হাসি ম্লান হয়ে এল একটু। তবুও জোর করে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘যা বলবি মন খুলে বল।” “তোর সেই বইটা হারিয়ে গেছে।'

“কোন বইটা বল তো?” অর্ক কি বুঝতে পারেনি কোন বইটার কথা বলতে চাইছে রজত? নিশ্চয় পেরেছে। আশা বড় বিষম বস্তু বটে। কিন্তু আশা কখন ক্ষীণ হতে হতে নিরাশায় বদলে যায়, বোঝা যায় না। “যে বইটা পড়তে দিয়েছিলি আমাকে। তোর খুব প্রিয় বই। সীমানা পেরিয়ে।' ঘরের মধ্যে অনেকক্ষণ কেউ কোনও কথা বলল না। এবং বলা বাহুল্য, অর্কর আশঙ্কাই সঠিক প্রমাণিত হল।

বইটা অর্কর খুব প্রিয় একটা বই। রজত ওটা নিয়েছিল প্রায় মাস ছয়েক আগে। অর্কর একটা দোষ আছে, ওর যা কিছু ভালো লাগে সেটা আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায়। বইটা ও পড়েছিল যখন ক্লাস এইটে পড়ত। হোস্টেল-জীবন। ওটা আসলে ইমরানের বই ছিল। বইটা এত ভালো লেগেছিল পড়ে যে, একরকম অভিভূত হয়েছিল সে অনেকদিন। ক্লাস টেন, হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় ইমরান ওই বইটা দিয়ে দিয়েছিল অর্ককে, বন্ধুত্বের স্মারক হিসাবে। সেই থেকে বইটা আছে তার কাছে। হোস্টেল-জীবনের স্মৃতি বিজড়িত, মলাট উঠে যাওয়া, অনেক পরনো একটা বই।