রবীন্দ্রগানের দীর্ঘ অন্বেষণ-পর্ব

জী বনস্মৃতি-তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'আমাদের পরিবারে শিশুকাল হইতে গানচর্চার মধ্যেই আমরা বাড়িয়া উঠিয়াছি। আমার পক্ষে তাহার একটা সুবিধা এই হইয়াছিল, অতি সহজেই গান আমার সমস্ত প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। তাহার অসুবিধাও ছিল। চেষ্টা করিয়া গান আয়ত্ত করিবার উপযুক্ত অভ্যাস না হওয়াতে, শিক্ষা পাকা হয় নাই। সংগীতবিদ্যা বলিতে যাহা বোঝায় তাহার মধ্যে কোনো অধিকার লাভ করিতে পারি নাই।' অথচ সেই সময়ে বিষ্ণু চক্রবর্তী, যদুভট্ট, অজপ্রকাশ ভদ্র, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী, শ্যামসুন্দর মিশ্র প্রমুখ একাধিক ধ্রুপদী গানের বিশিষ্ট গায়কদের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ‘বেতনভুক গায়ক' হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। বিষ্ণু চক্রবর্তীই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের আদি সংগীতগুরু। তবে নাড়া বেঁধে, নিয়ম করে গানের চর্চা আর মন দিয়ে রেওয়াজ করবার ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের কোনও দিনই আগ্রহ ছিল না। যেটুকু শিখেছেন সেটা কুড়িয়ে-বাড়িয়ে। অথচ ‘সুযোগ ছিল বিস্তর'। ছেলেবেলা-য় তিনি স্বীকার করেছেন, ‘বিষ্ণুর কাছে আনমনাভাবে ব্রহ্মসংগীত আউড়েছি। কখনো কখনো যখন মন আপনা হতে লেগেছে তখন গান আদায় করেছি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে।' রবীন্দ্রপূর্ব বাংলা-সঙ্গীতের ধারা ঠাকুরপরিবারে এসে একটা নতুন বাঁক নিয়েছিল। ব্রাহ্মসমাজের উপাসনার জন্য রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তি গভীর ভক্তিরসাত্মক এক ভিন্ন ধরনের সঙ্গীত রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। নিরাকার ব্রহ্মের আরাধনায় নিবেদিত এই গানগুলি ব্রহ্মসঙ্গীত হিসাবে পরিচিত। মনে করা হয় রামমোহন রায়ই ব্রহ্মসঙ্গীত রচনার আদি পথপ্রদর্শক। এই ধরনের সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অনেক সময় হিন্দুস্থানি রাগসঙ্গীতের সহায়তা নেওয়া হত। হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের সুরের অনুকরণে বা আভাষেই লেখা হয়েছিল তখনকার অনেক ব্রহ্মসঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথও সেই ধারায় রচনা করেছেন অসংখ্য সঙ্গীত, যেগুলি ভাঙাগান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
This story is from the March 17, 2025 edition of Desh.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber ? Sign In
This story is from the March 17, 2025 edition of Desh.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber? Sign In

মুছে দাও স্লেট
কয়েক শতক পিছিয়ে গেলে, একঘরে করা বা সামাজিক ও সম্মিলিত বর্জন প্রক্রিয়া অনেক বেশি নির্মম ও হঠকারী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অবিবেকী। এবং লক্ষণীয়, বর্জন বা একঘরে করা বা জনতার বিচার ও রায়দানের বিষয়গুলি সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

যাঁরা আধুনিকতার পাঠ পাননি এখনও
ক্যানসেল কালচার মানে একপ্রকার সামাজিক গণ-আচরণ, যেখানে নিন্দা, বয়কট আর বিদ্বেষের ঢেউয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—নৈতিক বিশুদ্ধতার নামে আমরা কি নিজের সুবিধামতো ইতিহাস বেছে নিচ্ছি?

গোত্রান্তর
সন্ধ্যার পর সোমনাথের বাতাস ভরে ওঠে মন্দিরের আরতির ধ্বনি আর মাছ শুকোনোর গন্ধে, আর গভীর রাতে সেই গন্ধে মিশে যায় সমুদ্রফেরা নৌকার ব্যস্ততা। এখানে কাহিনির মতো বেঁচে থাকে ভীলদের স্মৃতি, কিষেণজির অন্তিম জিরোনোর গল্প, আর এক পুরোনো জনপদের ঈশ্বর-মানুষের মিথ।

তপ্ত বৈঠক, বিতর্কে সম্পর্ক
আমেরিকা-ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠকে যে-উত্তাপ, তা হোয়াইট হাউস পেরিয়ে প্রভাব ফেলবে বিশ্বরাজনীতিতে।

যাদবপুর : ক্ষতির খতিয়ান
প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান মর্যাদা গরিমা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদেরও নিতে হবে।

নির্জন এককের গান
সমর্পণ ও নিবেদনের গানে গ্রন্থিত অনুষ্ঠানটি ভাবনা ও উপস্থাপনার সামগ্রিকতায় শ্রোতাদের পূর্ণ করে তোলে।

হিবিজিবি বাহিনী
বাংলা নাট্যের চলার পথে এক মাইল ফলক হয়ে থাকল চেতনা-র এই প্রযোজনাটি।

গণমাধ্যমের গিলোটিন
এখন একটা বিমূর্ত সমাজ, চণ্ডীমণ্ডপ ছাড়া অন্য কিছু নয়। চণ্ডীমণ্ডপ আসলে একটা ক্ষমতাকাঠামো। যে-কোনও ক্ষমতাকাঠামোই চায়, তা মানুষের মতামত, অস্তিত্ব এবং পছন্দকে নির্ধারিত করে দেবে। বাকি লোকজনকে তা মেনে চলতে হবে। যারা মেনে চলবে না, তাদের বাতিল করা হবে।

ট্রামের কফিনে শেষ পেরেক
ট্রাম ফেরেনি, কিন্তু ট্রামজাদুঘর গড়ে উঠেছে মহানগরে। কিন্তু এতে তো বর্তমান সরকার তার পূর্বসূরিদের অনুকরণ করেছে মাত্র।