রক্তাল্পতায় আয়ুর্বেদ

লিখেছেন ভারত সরকারের আয়ুর্বেদ গবেষণা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, বনৌষধি গবেষক আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডাঃ সুবল কুমার মাইতি।

বহু কারণে রক্তাল্পতা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপুষ্টি থেকেই রক্তল্পতা বা রক্তহীনতা আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই বেশি ভোগেন। আমাদের আর্থসামাজিক পটভূমিকায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে এমন একটা সূক্ষ্ম ভেদরেখা তৈরি হয়ে যায়, তার থেকে সহজে রেহাই পাওয়া মুশকিল। মা-বাবাকে ঠিক করতে হবে, হিসেবমতো ছেলেমেয়েদের খাদ্যাখাদ্য বিচার করে দিতে হবে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের একটুব বেশি খেতে হয় ঠিকই, তা বলে অর্ধেক বা তারও কম দেওয়াটা ঠিক নয়। তার কারণ মেয়েটাকেই পরবর্তী জীবন নতুন সংসারে গিয়ে ঝক্কি পোহাতে হবে, একেবারে শেষে খেতে হবে, তাকে মা হতে হবে। বাঙালি সমাজেও এই নিপীড়নের ভাষাটা একটু অন্য ধরনের প্রলেপ দেওয়ার জন্য লোকে বুঝতে পারে না।

যাই হোক— রক্তের রক্তকণিকা কমে গেলেই তাকেই রক্তাল্পতা বা রক্তহীনতা বলি, আয়ুর্বেদের পরিভাষায় পাণ্ডুরোগ, সাধারণের অতিপরিচিত অ্যানিমিয়া। এটি কখনও নিজেই একটি রোগ, আবার কখনও অন্য রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ। সঠিক কারণ না জেনে ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক। সেজন্য কথায় কথায় নিজের মতো করে আয়রন বা লৌহঘটিত ওষুধ খেতে নেই। সাধারণ, অপুষ্টি জনিত, অত্যধিক রক্তক্ষরণ জনিত, রক্তকণিকার ক্ষয়জনিত, অস্থিমজ্জার নিষ্ক্রিয়তা জনিত কারণে রক্তহীনতা দেখা দেয়। বদহজম, অম্বল, আমাশা, কৃমি, কোষ্ঠবদ্ধতা, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব— এগুলি অপুষ্টিজনিত রক্তাল্পতার সাধারণ কারণ। নানা রোগে ও দুর্ঘটনা জনিত রক্তক্ষরণ হলে রক্তাল্পতা হয়ে থাকে।

ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর যকৃতের রোগ, জীবাণু সংক্রমণ জনিত কিছু কিছু রোগে দীর্ঘদিন ভুগলে রক্তকণিকার ক্ষয় হয়। অত্যধিক মদ্যপান এবং কিছু কিছু জীবনদায়ী ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কখনও রক্তকণিকার ক্ষয় ঘটায়।