অপ্সরা

দূরে দাঁড়িয়ে মিড-ডে-মিলের রাঁধুনিরা। তারা হাতে লকড়ি-হাতাখুন্তি নিয়ে ‘হেই’-‘হেই’ করে গোমাতাকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু গোমাতার কোনও হেলদোল নেই।

- নীহারুল ইসলাম

ভ্যানরিকশয় চড়ে যাচ্ছিল ঝুড়িতে থরে থরে সাজানো পেয়ারা। সেই ঝুড়ির পাশেই বসেছিল সে। ডাগর ডাগর দুই চোখের মালকিন। আমার সঙ্গে তার চোখাচোখি হতেই আমি যেন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লাম। তবে তাকে ডাক দিতে ভুললাম না, ও পেয়ারাওয়ালি! দাঁড়াও— পেয়ারা নেব।

দাঁড়াও— পেয়ারা নেব। আজ ক’দিন ধরে বউ বলছে পেয়ারা আনতে। ভুলেই যাচ্ছিলাম। হয়তো আজকেও ভুলেই থাকতাম। ভাগ্যিস রাস্তায় অদ্ভুত আশ্চর্য দুই চোখের মালকিনের সঙ্গে দেখা! পেয়ারাওয়ালি তার চালককে বলে ভ্যানরিকশটিকে দাঁড় করিয়েছে খানিকটা দূরে গিয়ে। আমি রাস্তার পাশে সাইকেল স্ট্যান্ড করে ছুটে গেলাম তার কাছে। পেয়ারা কী দেখব? আমি তো তাকেই দেখছি! ততক্ষণে সে ভ্যানরিকশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। তাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, যেন কোনও দেবী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। আর আমাকে উদ্দেশ করে বলছে, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাল বিক্রি করি না। নেহাতই আপনার ‘পেয়ারাওয়ালি’ ডাকটা শুনে ভালো লাগল তাই দাঁড়ালাম। তা কতটা লিবেন জলদি বলেন। গোলাপনগর মোড়ে আমার পেয়ারার খরিদ্দাররা সব আমার মুখ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকারই কথা! এই মুখ, এই চোখ, এই শরীরস্বাস্থ্যকে অস্বীকার করে কে? কার এত সাধ্যি! বললাম, এক কেজি দাও।

সে বলল, দাম কিন্তু পঞ্চাশ টাকা। সে ভ্যানরিকশয় রাখা ঝুড়ি থেকে বেছে বেছে তুলে এক কেজি পেয়ারা মেপে দিল আমাকে। আমি তাকে পঞ্চাশ টাকা দিলাম। সে ভ্যানরিকশয় চড়ে চলে গেল। আমি তার চলে যাওয়া দেখলাম। প্রতিমা-শূন্য মণ্ডপের অবস্থা হয়ে পড়ল আমার হৃদয়-মন। ওই অবস্থায় আমি এক কেজি পেয়ারা নিয়ে এলাম বাড়িতে। বউ দেখে বলল, কোনদিকে চাঁদ উঠল আজ? আড়াইশো নয়, পাঁচশো নয়,