কোজাগরী

এই গল্পের মধ্যে অতীন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। বাসে, গজদন্তী মেয়েটির সাথে সিটের জন্য বিতর্ক এবং পরবর্তীতে কেটোয়ার দিকে যাওয়ার পথে সেই মেয়েটির সঙ্গে টোটোতে আবার দেখা। নানা হাসি-মজা, ব্যঙ্গ এবং ছোটোখাটো ঝগড়ায় অতীন অস্বস্তিতে পড়লেও প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশে কিছুটা প্রশান্তি লাভ করে।

- শাান্তনুু চক্রবর্তীী

এই, আপনি সরুন তো, বসতে দিন।' ‘অ্যা গজদাঁত বের করে নাকের কাছে তর্জনী উঁচিয়ে রণরঙ্গিনীর ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি, তার বয়স খুব বেশি হলে কুড়ি-বাইশ। মুখ-চোখ লাল, মাথা থেকে চুলের ক’গাছি এসে পড়েছে মুখে। ‘কিন্তু আপনি তো এখানে ছিলেন না। আপনি বসবেন কেন?'

“তা আপনিই বা কেন বসবেন শুনি?” পাশে দাঁড়ানো অন্য একটি মেয়ে ফুট কাটল। “আরে, আমি সেই কাটোয়া থেকে এই সিটের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ওই ভদ্রলোক উঠে গেলে আমারই তো বসার কথা।' “ও, পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেই সিট আপনার হয়ে গেল? বাহ।” “তাই তো নিয়ম।’ আরেকটি মেয়ে ওপাশ থেকে তেরিয়া মেজাজে বলল“এত নিয়ম দেখাবেন না তো। আমরা লেডিস দেখছেন না? লেডিসদের সম্মান দিতে জানেন না।” এবার বোঝা গেল দলে তিনজন। কী সব মেয়ে। আর কথা না বাড়িয়ে অতীন সরে দাঁড়াল। গজদন্তী মেয়েটি সিটে বেশ জাঁকিয়ে বসল। বসেই অর্ডার ছাড়ল— ‘অ্যাই, ব্যাগটা কই? আহ্, পায়ের কাছে নামায় কেউ? দে, আমাকে দে।”

বলেই প্লাস্টিকের মোটা একটা প্যাকেট কোলের মধ্যে জাপটে ধরল। ভিড়ে ভিড়াক্কার বাস, চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকল অতীন। এত যে লোক কেউ একটা প্রতিবাদ করল না। আরে লেডিস সিট তো নয়, তুই এখানে ছিলিসও না, তবে? মনে মনে গজরাতে লাগল অতীন। সে যাবে কাটোয়া জংশন থেকে ঘণ্টাখানেক দূরে দাদার পিসি শাশুড়ির বাড়ি।

প্রাচীন শহর কাটোয়া। ঐতিহাসিকই শুধু নয়, এখন ব্যবসাবাণিজ্যের একটা বড় কেন্দ্রও বটে। আশপাশের বিরাট অঞ্চলের মানুষজন এখান থেকে বিকিকিনি করতে নিত্য যাওয়া-আসা করে। সামনেই লক্ষ্মীপুজো সুতরাং কাটোয়াগামী বা প্রত্যাগত বাসে ভিড় এখন মাত্রাছাড়া। হঠাৎ দরজা থেকে হাতছানি দিয়ে কন্ডাক্টর তাকে ডাকল, “এই যে দাদা, গেটের দিকে এগিয়ে আসুন, আপনাকে নামতে হবে।'