কাজের ক্ষেত্রে সেফ স্পেস? শরীর বাঁচলে তবে মন!

দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। নীরব থাকার দিন শেষ। শরীরের উপর এসে পড়া আক্রমণের দ্রুত প্রতিকার চাই। কলম ধরলেন কবি যশোধরা রায়চৌধুরী।

এপ্রিল, ১৯৯৯। জেসিকা লাল, বয়স : ৩৪, পেশা: মডেলিং। দিল্লিতে এক সেলেব্রিটি পার্টিতে বার টেন্ডারের কাজ করতে ডাক পান। মেহরৌলিতে সেই অবৈধ, লাইসেন্সবিহীন বার এ রাত সাড়ে বারোটার পরে এক বিখ্যাত রাজনৈতিব নেতার পুত্র এসে ড্রিঙ্ক চাইলেন। জেসিকারা জানান, সময় পেরিয়ে গিয়েছে, ফলে সার্ভ করা যাবে না। পুরুষপুঙ্গব মনু শর্মার এতে রাগ হয়। ফলে চিৎকার চেঁচামেচি। রাত দুটো নাগাদ পরপর দু'টি গুলি, একটি বারের ছাদের দিকে লক্ষ্য করে, অন্যটি মাথা ফুঁড়ে দেয় জেসিকার। তার পর জেসিকার খুনের ‘জাস্টিস' পেতে, দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস মনে আছে অনেকেরই। সর্বসমক্ষে খুন হওয়ার পরেও, জেসিকার বিচার পেতে লেগেছিল সাত বছর! ২০০৬ এর ডিসেম্বরে খুনির সাজা হয়, কিছু সাংবাদিকের ও সমাজকর্মীর লাগাতার চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে। মানুষের পথে নামা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়, কারণ অপরাধী ছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। হঠাৎ এত দিন পরে এই ঘটনা মনে পড়ার কারণ কী? না, কোনও মিল নেই আরজি কর কাণ্ডের সঙ্গে। আজ যা নিয়ে উত্তাল বাংলার প্রতিটি মানুষ, এমনকি, গৃহকোণ থেকে মা-ঠাকুরমারাও বেরিয়ে এসেছেন স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে, মেয়েদের ডাক দেওয়া রাত দখল কর্মসূচিই হোক বা উই ওয়ান্ট জাস্টিসের আহ্বান। মানুষ ঘরে থাকতে পারছেন না, কারণ, একটি মেয়ে যে, আমাদের কারও সন্তান হতেই পারত, আজ ধর্ষিত ও মৃত, নিজের কর্মক্ষেত্রের চৌহদ্দির ভিতরে। না, একটি ছাড়া আদপেই কোনও মিল নেই দু'টি কেসে। মিলটা এই যে, দু'জনেই কর্মক্ষেত্রে মৃত। এবং রাতে। রাত দখল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আজ। হোক না জেসিকার কর্মক্ষেত্রটি ছিল এক মধ্যরাতে সরাইখানায় ধনীদের পার্টি, যেখানে মদ্যপদের তাণ্ডব থেকে মারামারি সবই খুব সম্ভাব্য। কিন্তু পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি? এটা তো প্রাপ্য নয় কোনও বার টেন্ডারের।