ওসাঁঝলি, তু ফিরে আয় কেনে। তুকে লিয়ে পোড়কুলের মেলায় যাব, লাগরদোলায় চড়ব, গরম গরম ঝিলাপি খাব। কত স্বপন দিখাইলি রে তু, সব ভাঙে চইল্যে যাবি?
সাঁঝলি কথা বলছে না আজ পাঁচদিন হয়ে গেল। কাজলের বুক ফেটে যাচ্ছে। এ ফাটা তো আর চৈত্রের ছাতিফাটা গরমে পুকুরের পাঁক ফাটা নয়, এই ফাটা চিরিক ফাটা। চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে এক অসহনীয় জ্বালা। এই জ্বালা বালতি বালতি জল ঢেলেও কমে না।
সাঁঝলি কুয়োতলা আসছে জল তুলতে, সাঁঝলি ছাগল দিগদড়া দিতে যাচ্ছে ডিহির মাঠে, সাঁঝলি কাপড় কাচতে যাচ্ছে পুকুর ঘাটে— একবারও মুখ ফিরায়ে ভালছে না। নাকি আড়চোখে ঠিক দেখে নিচ্ছে কাজলকে! নারীর চাহনি কি মরদ মানুষের বোঝা অত সোজা ! পলক ফেলতে না ফেলতেই কখন যে পোনামাছের ফাতনা নাড়ার মতো দিপিক করে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেবে তা বোঝার সাধ্য কি আছে ধীরেন টুডুর ব্যাটা কাজলের! কাজল তাই কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কথা বলতে গেলেও দাঁড়াচ্ছে না সাঁঝলি। পরো এডিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে।
সেদিন ডুমুরতলার কুয়ো থেকে কলসি ভর্তি জল নিয়ে যাচ্ছে সাঁঝলি, গলির ধারে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়েছিল কাজল। যেই সামনে এসেছে, অমনি বেরিয়ে পথ আগলে দাঁড়াল। সাঁঝলি বলল, পথ ছাড় কাজল।
একবার দাঁড়া কেনে সাঁঝলি, তুর সঙে কথা আছে। তুর সঙে হামার আর কুনু কথাটো নাই। বা রে! ইয়ার মধ্যিই সব কথাটো শ্যাষ হুয়ে গেল। কত বড় বড় কথা দিয়েছিলি, তুকে ছাড়া হামি আর কিছু ভাবতে লারি রে কাজল। তুকে একদিন না দেখলে মন আনচান আনচান করে। লাটকটো ভালোই করেছিলি বটে। হুঁ, লাটকই ছিল রে। মাকে বলেছিলাম, তুকে মেনে লিবেক নাই, তাইলে হামার কিছু করার আছে! বাপটোকে তো জানিস কেমন রাগী মানুষটো আছে। যদি শুনে, শালকাঠের চ্যালা দিয়ে মাথাটো ফালি ফালি করে দিবেক।
এখন তুর মা-বাপটো চইল্যে আসছে। মন যখন কাড়লি, তখন মুনে ছিলক নাই? তখন তো আমিই সব ছিলাম বটে। হাত ধইরো পলায় যাবি কইছিলি যে! হুঁ, কইছিলায়। পলায় গেলেই সব মিটে যাবেক! বুল কেনে? পলায়ে গাঁইয়ে আর ফিরতে লারবি রে কাজলে। মোর বাপ বাবুলালটো আছে না, তুকে ঠিক ছুঁড়ে বার করবেক। খুন করে ফেলে দিবেক তুকে!
Bu hikaye Sukhi Grihakon dergisinin December 2024 sayısından alınmıştır.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber ? Giriş Yap
Bu hikaye Sukhi Grihakon dergisinin December 2024 sayısından alınmıştır.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber? Giriş Yap
বন্যার আগে
একটা গল্প তৈরি হতে মনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট স্থান লাগে। বিম্বা ঠিক এমন একটা মুহূর্ত খুঁজছিল। কিন্তু বাইরের বৃষ্টি যেন তার সমস্ত চিন্তাভাবনাকে ধূসর করে দিয়েছে। মাথার উপর বেগুনি রঙের ছাতা ধরে, বৃষ্টিতে ভেজা লম্বা পোশাক আর মাটির কাদা মাড়িয়ে বিম্বা এগিয়ে চলেছে। এই বৃষ্টিভেজা দিনগুলিতে তার গল্প লেখার অভ্যাস বেড়ে উঠেছে। যদিও কবিতা তার আসল ভালোবাসা—যা মনের গভীরে নিজে নিজে প্রস্ফুটিত হয়, গর্ভস্থ শিশুর মতো। বিম্বার পাশের কটেজে থাকা মালিনীও যেন এমন এক যাপনের সন্ধানে এসেছেন। একসময়ের কর্মব্যস্ত জীবন পেরিয়ে, সিনিয়র হোমের নির্জন একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির কোলে এসে নিজেকে খুঁজছেন। ঝম, বিম্বার সাত বছরের সন্তান, এক বৃষ্টি ভেজা সকালে তার সরল আর মজার কথায় মালিনীর মনের জমে থাকা ক্লান্তি মুছে দেয়। যেন দীর্ঘদিনের একাকিত্বের পর নতুন করে কোনও সম্পর্কের উষ্ণতায় সিক্ত হচ্ছেন মালিনী। বৃষ্টি, অরণ্য আর মানুষের গল্প যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জীবন কোথাও থেমে থাকে না। সময়ের স্রোতে সবই একদিন গল্প হয়ে ওঠে।
অপমান
এটি একটি অনুভূতির গভীরতা ও পরিবারের সম্পর্কের অস্থিরতা নিয়ে লেখা একটি গল্পের অংশ। বনলতা, একজন প্রবীণ মহিলা, তার শাশ্বতী ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেক অপমান সহ্য করছেন। তার জীবন নানা অস্থিরতার মধ্যে বিভক্ত, এবং তিনি কখনওই নিজের জন্য কিছু ভাবেননি, সবসময় অন্যদের জন্য নিজেকে সামঞ্জস্য করেছেন। তবে, শাশ্বতীর কথায় আহত হয়ে তিনি এক ধরনের মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে পুনর্মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন, বিশেষত যখন তার আত্মবিশ্বাস এবং প্রাপ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইরাবতী, একজন সহানুভূতিশীল বন্ধুর মতো, বনলতাকে বুঝিয়ে দেন যে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, এবং তাকে নিজের শান্তি ও সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্গাপুরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
মিস এনসাইক্লোপিডিয়া
পিঙ্কি চক্রবর্তী, তেইশ বছর বয়সী, মুম্বাইয়ের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করছেন এবং বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের জীবনপঞ্জি প্রস্তুত করতে ভালোবাসেন। তার ফেসবুক পেজে প্রতিদিনই বিখ্যাত ও অখ্যাত ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশ করেন, যেগুলি অনেকের জন্য অজানা থাকে। তার এই কাজের ফলে, অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন এবং তাকে ‘মিস এনসাইক্লোপিডিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। পিঙ্কি একজন প্রামাণিক তথ্য সংগ্রাহক, যিনি অনেক সাহিত্যিক ও শিল্পীর জীবনভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং সেগুলি জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
সুন্দরের অন্তরমহল
পালমশায়ের গলার আওয়াজ মিহি ও মৃদু, তিনি কথা বলেন আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে, যেন হাওয়ায় ছবি আঁকছেন। গলা শুকিয়ে আসায় চা খাওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে তিনি গুপীর দোকানে যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যেখানে চা, টোস্ট এবং অন্যান্য নাস্তাও পাওয়া যায়। তাঁর এলাকার ইতিহাসের গল্প শোনাতে শোনাতে তিনি জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের নাটোর থেকে এসে মৃৎশিল্প শুরু করেছিলেন এবং এখন তাঁদের তৈরি মূর্তি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। পালমশায়ের মূর্তি তৈরির শৈলী গ্রিক বা রোমান শিল্পের প্রভাবের মতো, কিন্তু সেই সঙ্গে আছে বাঙালি নারীর সহজ সৌন্দর্য। তবে তাঁর স্ত্রী এ বিষয়ে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেন, এবং মৃৎশিল্পের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা তিক্ত।
ভালোবাসার ফুলছাপ
ধান কাটার পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় ক্লান্ত সুবল পবনের চায়ের দোকানে ঢুকেছিল। দোকানটি ঘরের কাছে, বাঁশের মাচায় বসার ব্যবস্থা। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তিনি শান্তিতে চুমুক দিচ্ছিলেন, এমন সময় বাইরে হারান আর নিমাইয়ের গলা শুনে তার কানে এল ললিতার নাম। তারা বলছিল, ইয়াকুব মিঞার সঙ্গে ললিতার নাকি বিয়ে হবে। ললিতার মতে, সে কাউকে ভয় পায় না, নিজের কাজ করবে। তবে হারান আর নিমাই মনে করছিলেন, ইয়াকুবের পরিবারের কাছে ললিতার জন্য ভালো কিছু হতে পারে। এসব কথা শুনতে শুনতে সুবলের মন মেঘলা হয়ে গেল, বিশেষত ললিতার সিদ্ধান্তের পর।
তিন রঙের ফুল
শাসুজিত বসাক শ্বেতী হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে দিতে দিতে বললেন, \"এখনও আগের মতোই ব্যথা আছে?\" সোমপ্রভা মুখ ঘুরিয়ে বললেন, \"এ শা, ব্যথা সহজে যাবে না। তাড়াতাড়ি করো...\" শাশ্বতী হাসলেন, \"কথায় কথায় এত রেগে যান কেন বলুন তো? রাগলে আপনার শরীর খারাপ হয়, বোঝেন না?\" সোমপ্রভা বললেন, \"হোক। তুমি মাথাব্যথা করো না।\" শাশ্বতী বুঝতে পারলেন, রাগ কমছে সোমপ্রভার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগও বেড়ে গেছে, তবে শাশ্বতী তা মেনে নিয়েছেন। শাশ্বতী জানতেন, রণজিৎ তাঁর মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন, কিন্তু শাশ্বতী কখনও কখনও বিরক্ত হতেন। রণজিৎ মারা যাওয়ার পর শাশ্বতী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন, কিন্তু সোমপ্রভা তাঁর পাশে ছিলেন।
গলি
নীলিমা মিত্র, একজন মনোবিদ, হাতে ধরা দামি মোবাইল ফোনটি থেকে চোখ তুলে তাকালেন এক দম্পতির দিকে। স্বামী-স্ত্রীর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে, নীলিমা তাঁদের সমস্যা জানতে চাইলেন। মানসিক সমস্যা বা আবেগের জটিলতা সমাধান করতে তিনি কথা বলেন, তবে কখনও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি হারান না। এই পরিস্থিতি তাঁর জন্য অস্বস্তিকর হলেও, তিনি তাঁর নিয়ম এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ক্লায়েন্টের সমস্যার মূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
মহুল ভিজা রাত
মহুলতলায় দাঁড়িয়ে আছে কাজল। বাইকটা স্ট্যান্ড দেওয়া আছে রাস্তার পাশে। অপেক্ষা করছে সে তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য।
রুদ্রাণী রূপে মা সারদা
একুশ শতকের নারী ভাবনার সঙ্গে উনিশ শতকের মা সারদার ভাবনার সাযুজ্য নিয়ে লিখছেন পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিব ঠাকুরের আপন দেশে
গাঢ় নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্বেতশুভ্র হিমালয়। পর্বতের গহিন অন্দরে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন কমলিনী চক্রবর্তী।