গনামামার গোয়েন্দাগিরি

তিওয়ারির কাছ থেকে দাম আদায় করে আরও বেশি টাকার লোভে জিনিসটা চুরি করে অন্য কাউকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল।”

- অরিন্দম আ চা র্য

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে এটাই ছিল গনামামার প্রথম প্রশ্ন, “বল তো জায়গাটার নাম জলপাইগুড়ি কেন?” সারা ট্রেন জুড়েই এমন একের পর-এক নিত্যনতুন প্রশ্নে আমার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। গনামামা নিজেই বলল, “জলপাই বা অলিভ তো জিনিস। আর গুড়ি মানে জায়গা। অর্থাৎ এই জায়গায় জলপাই উৎপন্ন হয়।

গনামামা হল আমার মায়ের খুড়তুতো ভাই। আমার চেয়ে ষোলো বছরের বড়। আসল নাম গহন বসুমল্লিক। নিজেদের বাড়ি মুম্বইয়ে হলেও পড়াশোনার সুত্রে এত কাল থাকত ইংল্যান্ডে। সেখানে কিংক্স কলেজে থেকে ইংরেজি ভাষার ব্যুৎপত্তি এবং বিবর্তন বিষয়ে গবেষণা করে কলকাতার একটা কলেজে সদ্য শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছে। গনামামার ছিপছিপে চেহারার বৈশিষ্ঠ্য দু'টি। এক, তার উচ্চতা ছ'ফুটের উপর। দ্বিতীয়, তার টলটলে গভীর কালো বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো। মায়ের আবদারে সে এখন আমাদের বাড়িতেই থাকে। এ বারের পুজোয় গনামামার ইচ্ছেতেই আমরা সবাই দার্জিলিং যাচ্ছি।

গোটা ট্রেনে অবশ্য গনামামা ছাড়াও আর-এক জনের সঙ্গে আলাপ হয়ে দারুণ মজা লেগেছে। সে আমাদের সহযাত্রী। রোগা, গালভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর সরু গোঁফের ভদ্রলোক ট্রেনে উঠেই আমার বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, “আপনাকে দেখে কেমন বাংলা সিনেমার আদিম কালের নায়ক বলে মনে হচ্ছে। কী যেন নাম?”

কথাটা শুনে মা হেসে কুটোকুটি। বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন, “আজ্ঞে আমাকে দেখে আপনার হঠাৎ আদিম নায়ক বলে কেন মনে হল?”

“এত লম্বা আর স্বাস্থ্যবান। কিছু একটা তো বলতে হবে। না হলে আলাপ হবে কী করে? নায়কটায়ক বললে লোকেরা বেশ খুশি হয়। আলাপ করতেও সুবিধে হয়। সারা রাত এক কুপে থাকব কি না! আপনি খুশি হলেন না বুঝি?”

বাবা বললেন, “এই কুপে আমার এই শ্যালক আর আমার ছেলে থাকবে। আমরা পাশেরটায় আছি। আমি আদিম নায়ক নই। কাজ করি একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কের মার্কেটিং হেড হিসেবে। নাম বিভাস মুখার্জি।”