দান-মাহাত্ম্যে অক্ষয় তৃতীয়া

ব্যবসায়ীরা অনেকেই এই তিথিতেই নববর্ষের পরিবর্তে তাদের ব্যবসার সূচনা বা হালখাতা করে থাকেন।

- প্রদীপ্ত সামন্ত

অক্ষয় অর্থাৎ যার ক্ষয় নেই বা যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনটিই মহাপুণ্য অক্ষয় তৃতীয়া নামে খ্যাত। মহিমান্বিত এই দিনটি থেকেই সত্য যুগের সূচনা হয়। গ্রহ-নক্ষত্রের মতো যুগেরও আবর্তন ঘটে। সত্যযুগের পর ত্রেতা, দ্বাপর, তারপর কলি। অক্ষয় তৃতীয়ার সঙ্গে অক্ষয় পুণ্য ও দান ধ্যানের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। শাস্ত্র বলে, এই তিথিতে যা কিছু জাগতিক কাজ করা যায় তাই অক্ষয় হয়। তাই ভক্তিমান মানুষ এদিন দান ধ্যান, পুজো পাঠ, নাম কীর্তন, শান্তি-স্বস্ত্যয়ন, বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করে থাকে। অনেকে পয়লা বৈশাখ নববর্ষের দিনে ব্যবসায়িক লেনদেনের খাতা না খুলে অক্ষয় তৃতীয়ার এই পূণ্য তিথিতে হালখাতার আয়োজন করেন। ধন সম্পদের দেব-দেবী লক্ষ্মী গণেশের পুজো করা হয়। ব্যবসায়ীরা খদ্দেরদের সঙ্গে নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এই দিনটিতে মিষ্টি মুখের আয়োজন করেন।

অক্ষয় তৃতীয়ার এই শুভ দিনে দান ধ্যানের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত দিন ঠিক কবে নির্ধারিত হল সে বিষয়ে সৃষ্টির আদি যুগকে কেন্দ্র করে এক পৌরাণিক আখ্যান বিশেষ প্রাসঙ্গিক। সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি ব্রহ্মা তাঁর সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করে একটু নিশ্চিন্ত হয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট তিন সন্তান— দেবতা, মানব, দৈত্য এরা স্বভাবে তিন প্রকৃতির। এদের প্রত্যেকের চরিত্রে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে— যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, তাদের ওই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা দোষের জন্যই তারা হাজার গুণে গুণান্বিত হয়েও চলার পথে এগতে পারবে না। অনেক ভেবেচিন্তে সৃষ্টিকর্তা তাঁর ছেলেদের শুভ সংস্কার ও শিক্ষাদানের জন্য নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন। দেব, মানব, দৈত্য— প্রত্যেকেই ব্রহ্মার কাছে বাস করে ব্রহ্মচর্য শিক্ষা লাভ

করলেন। এইভাবে প্রায় এক শতক কেটে গেল। শিক্ষা শেষে প্রত্যেকেই উপদেশ লাভের জন্য ব্রহ্মার কাছে হাজির হল। ব্রহ্মা প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথকভাবে ‘দ’ শব্দ উচ্চারণ করলেন। দেব, মানব, দৈত্য— প্রত্যেকেরই তাদের নিজস্ব প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা ছিল। তিনজনেই পিতার মুখনিঃসৃত ‘দ’ শব্দটির নিজ নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থ অনুধাবন করে পিতার নিকট ‘দ’ শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যা করলেন। ব্রহ্মা প্রত্যেকেরই উত্তরে খুশি হলেন এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে মহৎ হওয়ার আশীর্বাদ করলেন।