মহাজন

পরের দিন আবার সকাল সাড়ে ন'টার মধ্যে পোস্ট অফিসে হাজির হলাম। না, কলমটা পেয়ে যাব ঠিক এই আশা নিয়ে নয়। অন্য একটা চিন্তা মনের ভেতর কাজ করছে। কাউন্টার ফাঁকা।

- কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়

আমি একজন অতি অখ্যাত লেখক। মাঝেমধ্যে আমার লেখা হয়তো দু-একটা পত্রিকায় ছাপা হয়। গোটা কয়েক কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার দূরের বন্ধু বা আত্মীয়দের পোস্টে বই ও পত্রিকা পাঠাই। তারা কেউ পড়ে, কেউ না পড়েই দিব্যি মতামত জানায়। তফাৎটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আজও দুপুরের দিকে দুটো বইয়ের একটা পার্সেল আর একটা চিঠি নিয়ে পোস্ট অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বেরচ্ছি, খেয়াল হল কলম নেওয়া হয়নি। হাঁক পাড়তেই সুতপা একটা কলম এনে দিল বটে কিন্তু দেখলাম সেটার কালি শেষ। এবার নিয়ে এল একটা লাল কালির কলম। মেয়েকে ডেকে বললাম, মুনিয়া একটা কলম দে তো মা।

তোর মাকে দিয়ে হবে না। বাচ্চা মেয়ে। পড়াশোনা করছিল। সামনেই পরীক্ষা। হইচই শুনে বেরিয়ে এল। হাতে একটা কলম। বলল, এটা নাও ভালো লেখা পড়ে। আমার খুব পয়া। এটা দিয়েই পরীক্ষা দিই। আমার বেরনোর তাড়া ছিল। দ্রুত কলমটা সাইড ব্যাগের চেনের ভেতর সাবধানে ঢুকিয়ে চেন টেনে দিলাম। মেয়ের মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে বললাম, অন্য একটা দিলেই তো পারতিস। মুনিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আরে এটা দিয়ে খুব ভালো লেখা পড়ে। বুঝলাম ও চাইছে ওর কলমটা বাবা একটু ব্যবহার করুক। এই সদিচ্ছার প্রতিদান বেশি কিছু নয়, একটা চকোলেট দিলেই হবে। পোস্ট অফিসে কাউন্টারে একজন অল্পবয়সি মেয়ে। আগে দেখিনি। অবাঙালি। আমি সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হলে বাংলাতেই ঠিকানা লিখি। এর বাইরে হলে ইংরেজিতে। আজ ঠিকানা বাংলায় লেখা ছিল। মেয়েটি হিন্দিতে জানাল সে বাংলা জানে না। অন্তত নাম আর পিন কোডগুলো ইংরেজিতে লিখে দিলে ভালো হয়। আমি পেন বের করে লিখতে লাগলাম। একটু আগে থেকেই কানে আসছিল কোনও এক ব্যক্তি খুব জোরে জোরে সম্ভবত মোবাইলে কথা বলছে। আমি লিখতে লিখতে বুঝলাম শব্দের পারদ ক্রমশ চড়ছে।