কানাডার জলে জঙ্গলে

লিসা কখন নিজের হাতে এনে দিয়ে গেছেন জলের বোতল, আপেলের রস আর ওয়েফার। লাঞ্চ প্যাকেট খোলাই হয়নি। পড়েই রইল সেসব।

- লেখা: নিবেদিতা ঘোষ ছবি: সুবীর ঘোষ

সকাল সকাল বাক্সপ্যাঁটরা, খাবারদাবার গাড়ির ডিকিতে বোঝাই করে ভ্যাঙ্কুভার থেকে আমরা রওনা হলাম। যাব কানাডার অ্যালবার্টা প্রদেশের ব্যানফ ন্যাশনাল পার্ক। ৭৮০ কিলোমিটার রাস্তা। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে আমাদের ভাগ্নে সৌরভ। ও বলেই রেখেছিল, 'তোমরা ভ্যাঙ্কুভারে এলে আমার দায়িত্ব তোমাদের রকি পাহাড়ের কোলে ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে যাওয়া। কানাডায় এসে ব্যানফ না যাওয়াটা অন্যায়।”

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া আর অ্যালবার্টা প্রদেশ থেকে সেই যে যাত্রা শুরু করেছে রকি পাহাড়, ৪,৮২৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উত্তর আমেরিকায় গিয়ে থেমেছে। জঙ্গল, নদী, টলটলে নীল-সবুজ জলের হ্রদ, গ্লেসিয়ার— সব নিয়ে রকির সৌন্দর্যের খ্যাতি ভবনজোডা!

সৌরভ আগে থেকেই গাড়িতে স্নো-টায়ার লাগিয়ে নিয়েছিল। পাহাড়ে হঠাৎ বরফ পড়া শুরু হলে যাতে অসুবিধা না হয়। ভ্যাঙ্কুভার শহর ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরলাম। রাস্তায় যানজট বা ভিড় নেই কোথাও। আজ শুক্রবার, আগামীকাল থেকে এদের লম্বা উইকএন্ড। শনিবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটি, কিন্তু ওই দিনই রিকনসিলিয়েশন ডে পড়ায় তার জন্য ছুটি মিলেছে সোমবার। এরকম তিন-চার দিনের ছুটি পেলেই এখানে লোকে লংড্রাইভে বেরিয়ে পড়ে, বড় বড় গাড়ির মাথায় বা পিছনে সাইকেল, মোটরবোট এই সব বেঁধেছেদে। আবার আস্ত একটা বাড়ির মতো বিশাল ক্যারাভ্যানে সংসার গুছিয়ে নিয়েও বেরিয়ে পড়তে দেখছি। ট্র্যাফিক আইন না ভেঙে ঘণ্টায় ১৫০-২০০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি ছোটায় এরা। আট লেনের রাস্তার প্রান্তিক দুই লেন এদের জন্য নির্ধারিত।

আমরা টিম হর্টনসের দোকানে থামলাম, প্রাতরাশ করতে। খুব ভালো কফি করে এরা। পাশেই পেট্রল পাম্প, গাড়িতেও জ্বালানি ভরে নেওয়া হল। প্রকৃতিতে এখন 'ফল’ কালারের উৎসব। ঘোর সবুজ পাইনের ফাঁকে ফাঁকে হলুদ রঙে ছোপানো বার্চের জ্বলজ্বলে উপস্থিতি।