‘ঈশ্বর ঠিক রক্ষা করবেন

মা-বাবাকে হারিয়ে মানসিক অসুস্থতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গোলকধাঁধায় ঘুরছিল মেয়েটি। তারপর সহৃদয় কিছু মানুষের সাহায্যে পথ খুঁজে পায় মৌ! তাঁর সংকল্প এখন অনেক... অনেক বড় মানুষ হওয়ার। লিখেছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

মি মৌ বসু। ডটার অব সত্যপ্রসাদ বসু অ্যান্ড | মণিকা বসু। বেলেঘাটা ফুলবাগানে থাকতাম। এলএলবি করেছি সুরেন্দ্রনাথ ল'কলেজ ফ্রম ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি। ২০১৩ সালে পার্ট থ্রি পাশ করেছি।' একটানে বলে থামলেন ছোট চুলের মেয়েটি। এখন দেখলে কে বলবে, এই মেয়ের মাথায় একসময় জটা হয়ে গিয়েছিল? নিজের বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন? আইন নিয়ে পড়াশোনা করা মৌ মানসিক অসুস্থতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপরই আসা ‘ঈশ্বর সংকল্প’তে। মৌ মনে করেন, ঈশ্বরই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর দিকে।

২০১৮ থেকে ‘ঈশ্বর সংকল্প'র চেতলার শেল্টার মৌয়ের ঠিকানা। তিনি এখন একা হাতে সেখানকার লাইব্রেরির দায়িত্ব সামলান। ডিপ্রেশন পাল্টে দিয়েছিল তাঁর জীবন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি প্রকৃত অর্থেই অনেকের কাছে উদাহরণ।

কীভাবে এই সংস্থায় এসেছিলেন মনে পড়ে? চেয়ারে বসে হাত জড়ো করে অনেকটা পড়া মুখস্থ বলার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমার তো কোনও বিপদ হয়নি। বাবা, মা চলে যাওয়ার পর মাথার উপর তো কেউ ছিল না। ঈশ্বরই এখানে নিয়ে এসেছেন। সুস্থ তো হয়েছি। আমার উচ্চমাধ্যমিকের পর বাবা মারা যায়। ২০১৫তে মাকে হারাই। একা থাকতাম। ডিপ্রেশনে ভুগতাম। একদিন আমি রাস্তায় ঘুরছিলাম। স্থানীয় পার্টি অফিসের একজন আমাকে দেখে বুঝেছিলেন আমি অসুস্থ। শারীরিক এবং মানসিক আঘাত পেয়েছি। সেজন্য এখানে দিয়েছিল। ২০১৮-র শেষের দিকে এখানে এসেছি। এখানে যখন এসেছিলাম বাড়ি কোথায়, কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় কিছুই মনে ছিল না। চুলে জটা হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক, কেয়ার গিভার দিদিদের যত্নে ধীরে ধীরে সব মনে পড়েছে। নিজেকে ফিরে পেয়েছি।'